মানবদেহ আছে মানে সেখানে বিভিন্ন রোগ বাসা বাধবেই। তেমনিভাবে ডিভাইস যখন আছে তার বিভিন্ন সমস্যাও থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে রোগ সনাক্ত করে ওষুধ দিতে পারলে যেমন রোগ দ্রুত ভাল হয়ে যায় তেমনিভাবে ডিভাইসের ট্রাবলশুট করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে ডিভাইসটি ভাল হতে বাধ্য। তেমনি ট্রান্সফরমার মামাও কিন্তু বিভিন্ন রোগের শিকার হতে পারে। আর এই রোগ থেকে হতে পারে বিভিন্ন সমস্যাও। তাই ট্রান্সফরমারের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আজ আপনাদের সাথে আড্ডা জমাতে এসেছি। চলুন শুরু করা যাক।
প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি কয়েল ওপেন হয়ে যাওয়া
ট্রান্সফরমারের অনেকগুলো সমস্যার মধ্যে একটি সমস্যা হল ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি কয়েল ওপেন হয়ে যাওয়া। অনেক সময় টার্মিনাল কানেকশন লুজ হলে ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি কয়েলের এক বা তার অধিক ফেজ ওপেন হতে পারে। ফলশ্রুতিতে সাপ্লাই সাইড অথবা লোড সাইডে বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ হতে পারে।
সমাধানঃ
সাপ্লাই সাইড বা লোড সাইডের কয়েল কানেকশন ঠিক করা। প্রয়োজনবোধে উইন্ডিং পরিবর্তন করা যেতে পারে।
প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি কয়েল শর্ট সার্কিট হয়ে যাওয়া
অনেক সময় তাপমাত্রাজনিত কারণে ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি বা সেকেন্ডারি কয়েল শর্ট সার্কিট হতে পারে। এতে করে বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনা বা অগ্নিকান্ড ঘটতে পারে। অনেকসময় ইন্সুলেশন দুর্বল হলেও লোড অথবা সাপ্লাই সাইডের কয়েল শর্ট সার্কিট হতে পারে।
সমাধানঃ
কয়েল পুড়ে গেলে তা পরিবর্তন করাই উত্তম। প্রয়োজনবোধে ট্রান্সফরমারটি পরিবর্তন করা যেতে পারে।
ল্যামিনেটেড কোরে মরিচা পড়া
ট্রান্সফরমারের আরেকটি উল্লেখযোগ্য সমস্যার মধ্যে একটি হল ট্রান্সফরমারের ল্যামিনেটেড কোরে মরিচা পড়া। আমরা সবাই জানি, ট্রান্সফরমারের মূল অংশ কোর এবং কয়েল। একটিকে হৃদপিণ্ড অপরটিকে কলিজা বলে আখ্যা দেয়া যায়।
আর এই অংশ মানবদেহের অতি প্রয়োজনীয় অংশ। তাই কোরে যদি মরিচা ধরে তাহলে সেগুলো ভালভাবে কাজ করতে পারেনা। কোর কাজ করতে না পারলে হিস্টেরেসিস লস অনেক বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে।
সমাধানঃ
ট্রান্সফরমার কোরের মরিচা পরিষ্কার করা এবং প্রয়োজনবোধে কোরের পরিবর্তন করা।
ওভারলোডিং সমস্যা
ধরুন, কেউ যদি আপনাকে আপনার বহনক্ষমতার তুলনায় অধিক বোঝা চাপিয়ে দেয় তাহলে আপনার কি অবস্থা হবে? আপনি নিশ্চয়ই নেতিয়ে পড়বেন। তেমনি ট্রান্সফরমার বাবুরও নির্দিষ্ট পরিমাণ লোড ক্যাপাসিটি আছে। এর উপরে হলে ট্রান্সফরমারে ওভারলোডিং সমস্যা দেখা যায়। ওভারলোডিং এর ক্ষেত্রে ট্রান্সফর্মারের বুখলস রীলের সাথে সংযুক্ত এলার্ম সার্কিট সজোরে বেজে উঠে।
সমাধানঃ
বিশুদ্ধ পাইরিনল ওয়েল ব্যবহার করা যা ওভারলোডিং এর ক্ষেত্রে ট্রান্সফরমার কুলিং এর কাজে সাহায্য করবে। আগের যুগে বয়স্করা মাথা গরম হলে তা ঠান্ডা করার জন্য যেমন তেল ব্যবহার করতো ব্যাপারটিও ঠিক তেমন।
বুশিং এর ইন্সুলেশন ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া
আমরা সকলেই ট্রান্সফরমারের বুশিং দেখেছি। ট্রান্সফরমারের মাথার উপর শিং এর মত একটি অথবা তিনটি অংশ দেখা যায়। দেখে মনে হয় যেন ট্রান্সফরমারের মাথার উপর শিং গজিয়েছে। আর এই অংশটির নামই হল বুশিং। শুধু ট্রান্সফরমার নয়, উচ্চ পাওয়ারের সার্কিট ব্রেকারেও এই বুশিং দেখা যায়। বুশিং হল পাওয়ার ডিভাইসে ব্যবহৃত এক ধরনের ফাঁপা ইন্সুলেটর যা পরিবাহী তারকে কোন প্রকার বৈদ্যুতিক সংস্পর্শ ছাড়াই কোন কন্ডাক্টর সারফেসে সহজে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। সাধারণত এটি পোর্সেলিনের সাহায্যে তৈরি করা হয়। অন্যান্য ইন্সুলেটিং ম্যাটেরিয়াল দিয়েও এটি তৈরি হতে পারে।
বুশিং এর মধ্যে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক চাপকে সহ্য করার একটি নির্দিষ্ট ক্যাপাসিটি থাকে। আর এই ক্যাপাসিটিকেই বলা হয় ডাই-ইলেকট্রিক স্ট্রেন্থ।
এই সহ্য ক্ষমতার বাইরে গেলেই বুশিং ক্ষতিগ্রস্ত বা শর্ট সার্কিট হয়ে যায়। বিভিন্ন সাবস্টেশনে বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনাগুলো অধিকাংশ সময় ট্রান্সফরমার বা সার্কিট ব্রেকারের বুশিং থেকেই হয়ে থাকে।
সমাধানঃ
প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর সাবস্টেশন বা লোকাল পোল কমিশনিং করার ব্যবস্থা থাকা জরুরি। ট্রান্সফরমার ট্যান ডেল্টা টেস্ট বা ইন্সুলেশন টেস্ট খুব সতর্কতার সহিত করা উচিত যাতে কোন ভূল ত্রুটি না ঘটে।
পাইরিনল তেলে জলীয়বাষ্পের অনুপ্রবেশ
ট্রান্সফরমারের পাইরিনল তেলে জলীয়বাষ্প প্রবেশ করলে তেলের গুণাগুণ বিনষ্ট হতে পারে।
সমাধানঃ
ব্রীদারের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং ট্রান্সফরমারকে আর্দ্রতামুক্ত রাখা।
ট্রান্সফরমারের পাইরিনল ওয়েল লিকেজ
ট্রান্সফরমারের পাইরিনল ওয়েল লিকেজ হলে অনেক সময় সাবস্টেশনে অগ্নিকান্ড ঘটতে পারে।
সমাধানঃ
সাবস্টেশনে প্রচুর পাথর ব্যবহার করতে হবে যেন তেল লিকেজ হলেও ছিটিয়ে পড়তে না পারে।
ডিভাইস ট্রাবলশুটিং নিয়ে আরো কিছু পোস্ট