আমাদের যে সমস্ত ভূলের কারণে মেশিনের আয়ু কমে যায়

বাসা-বাড়ি, কলকারখানায় আমরা নানা ধরনের মেশিন ব্যবহার করে থাকি। এসব মেশিন আমাদের নিত্যদিনের অপরিহার্য অংশ। তবে আমাদের বিভিন্ন ভূলের কারণে এ সমস্ত মেশিনগুলোর কার্যকারিতা খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। মেশিনগুলোকে যথাযথাভাবে ব্যবহার না করতে পারলে সেটা আমাদের জন্যই ফলপ্রসু হবেনা। এই মাসে মেশিন রিলেটেড বিভিন্ন টপিক নিয়ে আলোচনা করেছি। আজ ঐ সমস্ত মেশিনগুলোর পরিচর্যা নিয়ে আলাপ করব। চলুন শুরু করা যাক।

বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত মেশিনের পরিচর্যা

শুরুটা আপনার বাসা থেকেই হোক। আপনার বাসায় নিশ্চয় মোটরচালিত অনেক ডিভাইস আছে যেমন হেয়ার ব্লোয়ার, ওয়াশিং মেশিন, ব্রেড টোস্টার, জুস ব্লেন্ডার, কফি মেকার, ইন্ডাকশন মোটরচালিত সিলিং ফ্যান। আপনি কি সেগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করছেন? আপনার ব্যবহৃত মেশিনগুলো মোটর বেইজড। মোটরের টর্ক তৈরি হবার মাধ্যমে মেশিনগুলো তাদের কার্যকারিতা প্রদর্শন করে থাকে। তাই এসব মেশিন ব্যবহারের সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরিঃ

সেগুলো হলঃ

  • জুস ব্লেন্ডারে খুব ভারী কোন জিনিস ব্লেন্ড না করাই ভাল। এতে মোটরকে খুব উচ্চমানের টর্ক সৃষ্টি করতে হয়। ফলে মোটরের উপর প্রেসার পড়ে এবং স্পীড কমে যায়। তাছাড়া অতিরিক্ত এম্পিয়ার প্রবাহের দরুণ শর্ট সার্কিট ফল্ট ও হতে পারে। আর উল্লেখ্য যে, মিহি জিনিস ব্লেন্ড করতে অল্প রেঞ্জেই ব্লেন্ড করা ভাল। হাইপাওয়ার পুশসুইচ বাটন পুশ না করাই শ্রেয়।
  • অপ্রয়োজনীয়ভাবে হেয়ার ব্লোয়ার ব্যবহার না করাই উত্তম। বিশেষ করে বাচ্চাদের থেকে এসব মেশিন দূরে রাখাটাই ভাল। মোটর মহাশয়কে আপনি যত ব্যস্ত রাখবেন কিংবা ওভারটাইম করাবেন সে তত নুইয়ে পড়ার সম্ভবনা থাকে।
  • একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, ভোল্টেজ আপ ডাউন করলে কিংবা ব্রাউনআউট হলে ঐ অবস্থায় মেশিন পরিচালনা করা মোটেও ঠিক না। এতে মেশিনের ক্ষতি হতে পারে।
  • অতঃপর টোস্ট মেকারে লিমিটের বেশি টোস্ট ইনসার্ট করা এবং ভূলবশত সুইচ অন করে চলে যাওয়া অনুচিত। এতে টোস্টারের ক্ষতি হতে পারে।
  • ওয়াশিং মেশিনে একসাথে কতগুলো কাপড় দেয়া যাবে তার লিমিটটা চেক করে নিন। অযথাই আন্দাজের উপর এসমস্ত মেশিন ব্যবহার না করাই উত্তম।
  • যাদের কফির বেশি নেশা আছে তাদের জন্য এ পয়েন্টটি খুব জরুরি। আপনার কফির নেশা আছে আর বাসায় রেডিমেইড কফি মেকার আছে বলে এই না যে সারাক্ষণ আপনি কফি মেকারকে ব্যস্ত রেখেই চলবেন। ওভারটাইম কাজ করা কোন মেশিনই পছন্দ করেনা। যেমন আপনার বস আপনাকে ফিক্সড টাইমের বাইরে আপনাকে ডিউটি করতে বললে আপনার কেমন লাগবে? তাই ব্যাচেলর হলে নিজে বানিয়ে নিন বা বাহিরে গিয়েও খেয়ে আসতে পারেন। আর বিবাহিত হলে ভাবীকে পটিয়ে নিন।
  • সিলিং ফ্যানের কথা না বললেই নয়। সিলিং ফ্যানে ব্যবহৃত মোটরের বিয়ারিং এ অনেক সময় ময়লা জমে জ্যাম হয়ে যায়। যার ফলে আপনার ফ্যানের পারফর্মেন্স ও ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে। তাই কয়েক মাস অন্তর অন্তর বিয়ারিং পরিষ্কার করে নিন। নিজে পারলে ত ভালই। নাহলে একজন ইলেকট্রিশিয়ান ডেকেও কাজটি করে নিতে পারেন।

ফ্যাক্টরিতে ব্যবহৃত মেশিনের পরিচর্যা

বাসাবাড়ির ডিভাইসের ক্ষেত্রে খুঁটিনাটি পরিচর্যার কথা ত বলা হল। এবার পাওয়ার ইন্ডাস্ট্রি লেবেলে আসা যাক। এ পরিসরে মেশিনের পরিচর্যাটা বেশ সেন্সিটিভ একটি বিষয়। এজন্য যা যা করণীয়ঃ

  • ফ্যাক্টরিতে দক্ষ এবং কর্মঠ অপারেটর নিয়োগ দিতে হবে। কারণ অপারেটরের উপরই আপনার মেশিন কন্ট্রোল করার ভার থাকবে।
  • ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহৃত সব মেশিনগুলো বার্ষিক কমিশনিং এর ব্যবস্থা থাকতে হবে। যেমন ট্রান্সফরমার ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা, মোটর ঠিকঠাক আছে কিনা, টারবাইন ফুল আর পি এম সঠিক সময় নিচ্ছে কিনা, বয়লারে সেটিং করা টেম্পারেচারে পানি উত্তপ্ত হচ্ছে কিনা এসব ব্যাপার পরীক্ষা করে নেয়া আবশ্যক।

আধুনিক সভ্যতার চালিকাশক্তি হল মেশিন। সেই মেশিনের পরিচর্যা সঠিকভাবে করতে না পারলে সভ্যতা হুমকির মুখে পড়তে পারে। তাই আমাদের উচিত ইন্ডাস্ট্রি এবং ঘরোয়া পর্যায়ে মেশিনের সঠিক পরিচর্যা করা।

মেশিন নিয়ে আরো আর্টিকেল পড়ুন

মেশিনের H.P এবং B.H.P এর মধ্যে পার্থক্য কি?

ডিসি মেশিনের ব্যাসিক ধারণাঃ পর্ব-১ | মোটর-জেনারেটর

ডিসি মেশিনের ব্যাসিক ধারণাঃ পর্ব-২ | মোটর-জেনারেটর