পৃথিবীর ভোল্টেজ/বিভব শূণ্য বিবেচনা করা হয় কেন?

আমরা সকলেই জানি, পৃথিবীর ভোল্টেজ/বিভব শূণ্য। সাধারণত কোন বৈদ্যুতিক সার্কিটকে যদি গ্রাউন্ডিং করা হয় তাহলে আমরা সেই গ্রাউন্ড ভোল্টেজকে শূণ্য ধরে সার্কিটের বিভিন্ন প্রান্তের ভোল্টেজ হিসেব করে থাকি। কিন্তু কেন আমরা পৃথিবীর ভোল্টেজকে শূন্য বিবেচনা করে থাকি? আজ সে ব্যাপারে আলোচনা করব। চলুন শুরু করা যাক।

বিভব বলতে মূলত কি বোঝায়?

বিভব হল কোন বস্তুর চার্জের ঘনত্ব। বিদ্যুৎ প্রবাহ কোন প্রান্ত থেকে কোন প্রান্তে প্রবাহিত হবে তা নির্ভর করে ঐ বস্তু দুটির বিভব পার্থক্যের উপরে। বিভব / ভোল্টেজ পার্থক্যই হলো এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে অথবা কোন পরিবাহীর দুটি বিন্দুর মধ্যে তড়িৎ প্রবাহের মূল চালিকাশক্তি।

অন্যভাবে যদি বলা হয় তাহলে, কোনাে পরিবাহী হল ইলেকট্রনের আধার। এখন এই পরিবাহী থেকে ইলেকট্রনকে বিচ্যুত করতে যে পরিমাণ কাজ করতে হবে তাকেই বলে বৈদ্যুতিক বিভব।

কাজ ও বিভবের ধারণা

অসীম দূরত্ব থেকে একটি একক ধনাত্মক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের কোনাে বিন্দুতে আনতে যে পরিমাণ কার্য করতে হয় তাকে ওই বিন্দুর তড়িৎ বিভব বলে।

গাণিতিকভাবে, অসীম দূরত্ব থেকে +Q একক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের কোনাে বিন্দুতে আনতে যদি একক কার্য করতে W কৃতকার্য হয় তবে ঐ বিন্দুর তড়িৎ বিভব হয়, V=W/Q একক।

উচ্চ বিভব ও নিম্ন বিভব

কোনো একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ ধনাত্মক আধান উপস্থিত থাকলে সেই ক্ষেত্রটি উচ্চবিভবে আছে বলা হয় এবং অনুরূপভাবে কোনাে একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ ঋণাত্মক আধান উপস্থিত থাকলে সেই ক্ষেত্রটি নিম্নবিভবে আছে বলা হয়। এখন প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ সর্বদা ইলেকট্রন (ঋণাত্মক আধানে আহিত)-এর গতির অভিমুখ বিপরীত দিকে হয়।

বিভবপার্থক্য

দুটি সমজাতীয় বা বিপরীত জাতীয় তড়িৎগ্রস্ত বস্তুর মধ্যে বিভবের যে পার্থক্য হয়, তাকে ওদের বিভব প্রভেদ বা বিভব পার্থক্য বলা হয়।

পৃথিবীর ভোল্টেজ শূণ্য বিবেচনা করা হয় কেন?

এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে চলুন একটু সমুদ্রের কিনারা থেকে ঘুরে আসি। মনে করুন, আপনি বিশাল সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। এখন সমুদ্রের দিকে লক্ষ্য করুন। এখানে আছে বিশাল জলরাশি। এই সুবিশাল জলরাশি থেকে যত বালতি পানিই আপনি তুলুন কিংবা ঢালুন না কেন সমুদ্রের জলের পরিমাণের কোন তারতম্য হবেনা। এখন হয়তো ভাবছেন, ভোল্টেজের মধ্যে আবার সমুদ্রের পানির কথা কেন আসছে? চলুন এর নেপথ্যে কারণ জেনে আসি।

সমুদ্র যেমন বিশাল জলভান্ডার তেমনি পৃথিবীও ইলেকট্রন সাগরে নিমজ্জিত। সমুদ্রের পানি তুলে আনলে বা এতে একশত বালতি পানি যোগ করলেও যেমন জলের তারতম্য ঘটেনা তেমনি পৃথিবীতেও ইলেকট্রনের ঘাটতি বা বাড়তি হলেও ভোল্টেজ বা নীট পটেনশিয়ালে পরিবর্তন ঘটেনা। তাই পৃথিবীর বিভব শূণ্য বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

আরো কিছু আর্টিকেল

কোন সাপ্লাই লাইনে এসি বা ডিসি ভোল্টেজ কিভাবে সনাক্ত করব?

+9 volt এবং -9 volt এর মধ্যে পার্থক্য কি? | পজিটিভ এবং নেগেটিভ ভোল্টেজ

ভোল্টেজ এবং কারেন্ট নিয়ে কিছু মজার এবং বিচিত্র প্রশ্ন