ইন্ডাকশন মোটর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর কাজ শুধুমাত্র মোটর তৈরি করা না। বরং মোটর যেনো বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেকে রক্ষা করতে পারে সেই দিকটাও নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব। আর এসব পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য মোটরের ভিতরেই বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় যাকে বিল্ট-ইন প্রোটেকশন সিস্টেম বলা হয়।
ইন্ডাকশন মোটরের বেশ কিছু বিল্ট-ইন প্রোটেকশন সিস্টেম রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো ম্যাগনেটিক ইন্ডাকশন মোটর স্টার্টার।
ম্যাগনেটিক ইন্ডাকশন মোটর স্টার্টার মূলত একটি সার্কিট, যা মোটরের পাওয়ার সাপ্লাই এর সাথে সংযুক্ত করা থাকে। এ সার্কিটের কার্যপদ্ধতি খুবই সহজ-সরল, শুধুমাত্র কিছু সুইচ এবং রিলের মাধ্যমে পুরো সার্কিটটি গঠিত।
ম্যাগনেটিক ইন্ডাকশন মোটর স্টার্টার এ যেসব প্রোটেকশন ফিচার থাকে তার মধ্যে অন্যতম হলঃ
- শর্ট সার্কিট প্রোটেকশন
- ওভার লোড প্রোটেকশন
- আন্ডার ভোল্টেজ প্রোটেকশন
শর্ট সার্কিট প্রোটেকশন
যদি কোন কারণে মোটরের পাওয়ার সাপ্লাইয়ের কোন তার শর্ট হয়ে যায় তাহলে মোটরের ভেতর বিপুল পরিমাণে কারেন্ট প্রবাহিত হবে। এতে মোটর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমনকি কখনো কখনো মোটরের কয়েল পুড়েও যেতে পারে। তাই এই অসুবিধা থেকে বাঁচার জন্য মোটরে শর্ট সার্কিট প্রোটেকশন ব্যবহার করা হয়।
শর্ট সার্কিট প্রোটেকশনটি মূলত F1, F2 এবং F3 ফিউজের সমন্বয়ে গঠিত। যখনই মোটরে এর রেটেড কারেন্টের থেকে অনেক বেশী পরিমাণে কারেন্ট প্রবাহিত হতে শুরু করে, তৎক্ষণাৎ ফিউজটি পুড়ে গিয়ে মোটরকে পাওয়ার সাপ্লাই হতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। যার ফলে মোটর সুরক্ষিত থাকে। কিন্তু মোটর স্টার্টিং এর সময় যে ইনরাশ কারেন্ট প্রবাহিত হয়, অথবা অত্যাধিক লোড সংযুক্ত করা হলেও অনেক বেশি কারেন্ট প্রবাহিত হয় তখন ফিউজটি পুড়বে না। কারণ ফিউজটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন ফুল-লোডের কয়েকগুণ পরিমাণ কারেন্টও এটি ধারণ করতে পারে। কিন্তু যখনি কারেন্টের পরিমাণ একটি নির্দিষ্ট সীমার বাইরে চলে যাবে, ফিউজটি পুড়ে গিয়ে মোটরের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
ওভার লোড প্রোটেকশন
মোটরে যে শুধুমাত্র শর্ট সার্কিটের কারণে অত্যাধিক কারেন্ট প্রবাহিত হয় এমনটি নয়। ওভার লোডিং এর সময়ও মোটরে অধিক পরিমাণ কারেন্ট প্রবাহিত হয়।
ইন্ডাকশন মোটরে যখন এর ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত লোড চাপিয়ে দেয়া হয়, তখন একে ওভার লোডিং বলা হয়।
মোটরে সামান্য কিছু সময়ের জন্য ওভার-লোডিং স্বাভাবিক হলেও ক্ষতিকর তখনই হয় যখন এই ওভার লোডটি স্থায়ী হয়। আমরা শর্ট সার্কিট প্রোটেকশন এর জন্য যে ফিউজ ব্যবহার করেছি তা ওভার-লোডিং কারেন্টকে প্রতিহত করতে পারে না। এর কারণ ওভার লোডে শর্ট সার্কিটের চাইতে অনেক কম পরিমাণ কারেন্ট প্রবাহিত হয়।
আর যদি আমরা শর্ট সার্কিট ফিউজের সীমাকে কমিয়ে দেই তাহলে সামান্য পরিমাণ ওভার লোডিং এর ফলেই ফিউজটি পুড়ে যাবে। আর এর জন্য আলাদা একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় যাকে ওভারলোড প্রোটেকশন বলা হয়। নিচের চিত্রে ওভার লোড প্রোটেকশন দেখানো হলোঃ
ওভার লোড প্রোটেকশন ফিচারটিকে OL দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। একটি ওভার লোড প্রোটেকশন সিস্টেম মূলত ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
- ওভার লোড হীট সেন্সর এবং
- ওভার লোড সুইচ।
ওভার লোড হীট সেন্সর গুলো থ্রি ফেইজ লাইনের প্রতিটি ফেইজের সাথেই সংযুক্ত থাকে। নরমাল কন্ডিশনে ওভার লোড সুইচটি বন্ধ থাকে। কিন্তু যখনই অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহিত হতে থাকে তখন এর তার গুলো গরম হয়ে যায এবং ওভারলোড হীট সেন্সরগুলো সেই তাপকে সনাক্ত করতে পারে।
যখন একটি মোটরে ওভার লোড হয়, অতিরিক্ত কারেন্টের ফলে তার গরম হতে কিছুটা সময় নেয়। সাধারণত ইন্ডাকশন মোটর সামান্য পরিমাণ কারেন্টের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। কিন্তু যখনই অত্যাধিক তাপ উৎপন্ন হয়, নিচে থাকা ওভার লোড সুইচটি খুলে যায়। ফলে বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং মোটরটি সুরক্ষিত থাকে।
আন্ডার ভোল্টেজ প্রোটেকশন
মোটর যেমন শর্ট সার্কিটের অতিরিক্ত ভোল্টেজ এবং কারেন্ট দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেমনি প্রয়োজনের তুলনায় ভোল্টেজ সাপ্লাই কম হলেও মোটরের ক্ষতি হতে পারে। এই ক্ষতির হাত থেকে ইন্ডাকশন মোটরকে রক্ষা করতে আন্ডার ভোল্টেজ প্রোটেকশন সিস্টেম ব্যবহার করা হয়।
M1, M2, M3 এবং M4 এই ৪ টি সুইচ এবং ম্যাগনেটাইজিং রিলে M দিয়ে এই প্রোটেকশন সিস্টেমটি গঠিত। যখনই সাপ্লাই ভোল্টেজের পরিমাণ অনেক বেশী কমে যায় তখন ম্যাগনেটাইজিং রিলে তা সনাক্ত করতে পারে। ম্যাগনেটাইজিং রিলেটি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ভোল্টেজ সাপ্লাই পেলেই চুম্বকায়িত হয়। কিন্তু আন্ডার ভোল্টেজের সময় তা চুম্বকায়ন হয় না এবং সুইচগুলো তৎক্ষণাৎ খুলে যায়। এতে করে মোটর এবং মোটরের যন্ত্রাংশ লো-ভোল্টেজের হাত থেকে রক্ষা পায়।
ব্যবহৃত সাংকেতিক চিহ্নসমূহঃ
ম্যাগনেটিক ইন্ডাকশন মোটর স্টার্টার সার্কিটে যেসব সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহৃত হয় তা নিচের চিত্রে দেওয়া হলোঃ
ইন্ডাকশন মোটর সম্পর্কে অন্যান্য লেখা সমূহঃ
ইন্ডাকশন মোটরঃ প্রকারভেদ এবং গঠন
থ্রী ফেইজ ইন্ডাকশন মোটরের কার্যপদ্ধতি
ইন্ডাকশন মোটরের ইকুইভ্যালেন্ট সার্কিট