নোড, জাংশন, ব্রাঞ্চ, লুপ ও মেশ সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা

আজ আমরা সার্কিট টারমিনোলজির মৌলিক বিষয় নোড, জাংশন, ব্রাঞ্চ, লুপ, মেশ ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। সার্কিটের ম্যাথ করতে গেলে আমাদের এসব বিষয় জানতে হবে নয়ত সার্কিটের ম্যাথ সমাধান করা যাবে না।

আমাদের আজকের আলোচনায় যা যা থাকছেঃ

নোড কি?

কোন সার্কিটে যখন দুইটি Elements বা উপাদান একটি সাধারণ বিন্দুতে যুক্ত থাকে তখন ঐ সাধারণ বিন্দুকে নোড বলা হয়।

নোড
চিত্র-১ঃ নোড

চিত্র-১ লক্ষ্য করুন। এখানে দুইটি উপাদান R1 ও R2 রেজিস্টর একটি সাধারণ বিন্দু a তে যুক্ত আছে। এখানে a হচ্ছে একটি নোড। সার্কিটে কোন নোডকে ডট বা বিন্দু চিহ্ন দিয়ে বুঝানো হয়।

নোডের প্রকারভেদ ও ব্যাখ্যাঃ

নোড সাধারণত দুই প্রকার। যথা-

  1. সিম্পল (Simple) নোড
  2. প্রিন্সিপল (Principle) নোড

সিম্পল নোডঃ যে সকল নোড শুধুমাত্র দুটি উপাদান নিয়ে গঠিত হয় সে সকল নোডকে সিম্পল নোড বলে।

অর্থাৎ, সিম্পল নোডে মাত্র দুইটি উপাদান একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে।

যেহেতু চিত্র-১ এর নোড মাত্র দুইটি উপাদান এর সমন্বয়ে গঠিত তাই এটি একটি সিম্পল নোড।

আমরা আরো একটি সার্কিট দেখি-

নোড
অনেকগুলো নোড
  • এই সার্কিটে ভোল্টেজ সোর্স V1 ও রেজিস্টর R1 এই দুইটি উপাদান A বিন্দুতে মিলিত হয়েছে তাই এটি একটি সিম্পল নোড।
  • একইভাবে V2 ও R1 বিন্দু G তে এবং R2 ও V2 বিন্দু F তে মিলিত হয়েছে তাই G এবং F বিন্দু দুইটিও সিম্পল নোড।

চিত্রে লাল চিহ্নিত বিন্দু গুলো এক একটি সিম্পল নোড

প্রিন্সিপল নোডঃ যে সকল নোড দুইয়ের অধিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত তাকে প্রিন্সিপল নোড বলে।

উপরের সার্কিটটি আবারো লক্ষ্য করি,

এখানে,

  • D বিন্দুতে ৩ টি উপাদান (R3 রেজিস্টর, R2 রেজিস্টর ও V3 ভোল্টেজ সোর্স) এসে মিলিত হয়েছে তাই এটি একটি প্রিন্সিপল নোড।
  • B বিন্দুও একটি প্রিন্সিপল নোড কারণ এখানে R3 রেজিস্টর, R4 রেজিস্টর ও V1 ভোল্টেজ সোর্স এসে মিলিত হয়েছে।

চিত্রে সবুজ চিহ্নিত বিন্দু গুলো এক একটি প্রিন্সিপল নোড।

জাংশন কি?

যে পয়েন্টে তিন বা তার অধিক সার্কিট উপাদান যুক্ত থাকে তাকে জাংশন বলে।

আমরা একটু আগে দেখেছি যে, B এবং D বিন্দুতে তিনটি উপাদান এসে যুক্ত হয়েছে।

মূলত প্রতিটি জাংশনই এক একটি প্রিন্সিপল নোড। এদের ক্ষেত্রে প্রধান মিল হলো প্রত্যেকটিতে দুইয়ের অধিক সার্কিট উপাদান যুক্ত থাকবে। তবে সার্কিট সমাধানের সুবিধার্থে জাংশনকে আলাদাভাবে গণনা করা হয়।

ব্রাঞ্চ কি?

ব্রাঞ্চ হচ্ছে সার্কিটের এমন একটি পথ (Path) যেখান দিয়ে সবসময় একই পরিমাণ কারেন্ট প্রবাহিত হয়।

সাধারণত একটি ব্রাঞ্চ নির্ধারণ করা হয় দুটি জাংশনের মধ্যবর্তী সম্ভাব্য পথ সংখ্যার উপর।

অর্থাৎ, দুটি জাংশের মধ্যে যতগুলো পথ পাওয়া যাবে ঠিক ততো সংখ্যা ব্রাঞ্চ হবে।

ব্রাঞ্চের ব্যাখ্যাঃ

নিচের সার্কিটে B এবং D হচ্ছে দুটি জাংশন। এই দুইয়ের মাঝে আমরা যতোগুলো সম্ভাব্য পথ পাবো প্রতিটা পথই ব্রাঞ্চ।

তাহলে এবার দেখা যাক আমরা B এবং D এর মধ্যে কি কি পথ পাচ্ছি-

সার্কিট ব্রাঞ্চ
সার্কিট ব্রাঞ্চ

আমরা যদি B থেকে শুরু করে A ও F হয়ে D তে আসি তাহলে B থেকে A ও F ঘুরে D পর্যন্ত হচ্ছে একটা পথ। আবার B থেকে যদি সরাসরি R3 হয়ে D তে আসি তাহলে এটা একটা পথ এবং যদি B থেকে শুরু করে C ও E ঘুরে D তে আসি তাহলে B থেকে C ও E হয়ে D পর্যন্ত হবে আরো একটা পথ। এখানে আমরা যে ৩ টি পথ পেলাম প্রতিটাই হচ্ছে এক একটি ব্রাঞ্চ। এবার যদি ব্রাঞ্চ গুলোকে আমরা সাজাই তাহলে,

  • প্রথম ব্রাঞ্চ BAFD.
  • দ্বিতীয় ব্রাঞ্চ BD (মাঝখানে R3 রেজিস্টর সংযোগ করা)। এবং
  • তৃতীয় ব্রাঞ্চ BCED.

অতএব, এই সার্কিটে মোট ৩ টি ব্রাঞ্চ রয়েছে।

লুপ কি?

যদি সার্কিটের কোন বিন্দু দিয়ে কারেন্ট প্রবাহ যাত্রা শুরু করে পুরো একটি পথ ঘুরে কারেন্টের মান অপরিবর্তিত রেখে আবার সেই বিন্দুতেই ফিরে আসে তাহলে এই পুরো পথটি হবে একটি লুপ।

অর্থাৎ, সার্কিটের ক্লোজড পথকেই লুপ বলা হয়।

লুপের ব্যাখ্যাঃ

লুপ
লুপ

ধরা যাক, A পয়েন্ট হতে একটি কারেন্ট যাত্রা শুরু করে B ও D হয়ে F ঘুরে আবার A তে ফিরে আসলো তাহলে ABDFA হচ্ছে একটি লুপ। একইভাবে যদি কারেন্ট B পয়েন্ট হতে যাত্রা শুরু করে C ও E হয়ে D ঘুরে B বিন্দুতে ফিরে আসে তাহলে BCEDB একটি লুপ। এছাড়া এই সার্কিটের A বিন্দু হতে যাত্রা শুরু করে B হয়ে C, E, D, F ঘুরে যদি আবার A তে ফিরে আসে তাহলে এখানে ABCEDFA একটি লুপ।

অতএব উপরের সার্কিটে মোট ৩ টি লুপ রয়েছে।

মেশ কি?

মেশ হচ্ছে সেই সকল লুপ যার ভিতর অন্য কোন লুপ থাকে না।

মেশ এবং লুপ প্রায় একই। তবে মূল পার্থক্য হচ্ছে একটি লুপের ভিতরে একাধিক লুপ থাকতে পারে কিন্তু একটি মেশের ভিতর কোন লুপ থাকেনা না।

মেশের ব্যাখ্যাঃ

মেশ

যেহেতু সার্কিটে ABDFA ও BCEDB লুপের ভিতরে অন্য কোন লুপ নেই তাই এরা এক একটি মেশ এবং সেই সাথে লুপ।

কিন্তু সার্কিটে ABCEDFA লুপ হলেও তা কোন মেশ না কারণ এই লুপের ভিতরে আরো দুইটি লুপ ABDFA ও BCEDB রয়েছে যা BD পরিবাহী পৃথক রয়েছে।

তাহলে আমরা বলতে পারি, প্রত্যেক মেশই লুপ কিন্তু প্রত্যেক লুপ মেশ না।

এই সার্কিটে মোট দুইটি মেশ রয়েছে।

আমরা এখন ছোট একটা সার্কিট হতে নোড, জাংশন, ব্রাঞ্চ, লুপ ও মেশ সংখ্যা কিভাবে বের করতে হয় তা জানবো।

নিচের চিত্রটি লক্ষ্য করিঃ

এখানে একটি সার্কিট দেওয়া আছে।  যার মধ্যে V1, V2 ও V3 হচ্ছে ভোল্টেজ সোর্স এবং R1, R2 ও R3 হচ্ছে রেজিস্টর।

এখন এই সার্কিট হতে নোড, জাংশন, ব্রাঞ্চ, লুপ ও মেশ সংখ্যা বের করতে হবে।

নোড বের করার উপায়ঃ

আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি, কোন সার্কিটের দুই বা ততোধিক উপাদান যে বিন্দুতে মিলিত হয় তা হচ্ছে নোড।

উপরের সার্কিটে আমরা দেখতে পাচ্ছি,

  • V1 ভোল্টেজ সোর্স এবং R1 রেজিস্টর a বিন্দুতে মিলিত হয়েছে। তাই এখানে a একটি নোড। আবার V1 ভোল্টেজ সোর্স ও R2 রেজিস্টর b বিন্দুতে মিলিত হয়েছে তাই b একটি নোড।
  • d বিন্দুতে R1, R2 ও R3 মিলে একটি নোড এবং c বিন্দুতে V1, V2, V3 মিলে আরেকটি নোড তৈরি হয়েছে। যেহেতু এই সার্কিটে আর কোথাও এরকম সংযোগ নেই তাই আমরা বলতে পারি, এই সার্কিটে মোট ৪ টি নোড রয়েছে।

একই সাথে এই সার্কিটের সিম্পল নোড হচ্ছে a ও b এবং প্রিন্সিপল নোড হচ্ছে c ও d.

মনে রাখবেন, যদি তিনটি নোডের মধ্যে দুটি বা ততোধিক উপাদান না থাকে তবে ঐ তিনটি নোডকে একটি একক নোড হিসেবে যুক্ত করা যায়।

নিচের সার্কিট দুটি লক্ষ্য করুনঃ

শেষ অবধি, সার্কিটটি আবার নতুন করে তৈরি করলে নিম্নরূপ হবেঃ

জাংশন সংখ্যা বের করার উপায়ঃ

আমরা জানি যে, একটি জাংশনে কমপক্ষে তিনটি উপাদান একটি বিন্দুতে যুক্ত থাকে।

আমরা উপরের সার্কিট হত দেখতে পাচ্ছি যে, a ও b বিন্দুতে ৩ টি করে উপাদান যুক্ত রয়েছে। সুতরাং এই সার্কিটে জাংশন সংখ্যা ২ টি।

ব্রাঞ্চ সংখ্যা বের করার উপায়ঃ

একটা জাংশনের মাঝে সম্ভাব্য সকল পথ হচ্ছে ব্রাঞ্চ এবং প্রতিটি ব্রাঞ্চের মধ্য দিয়ে একই পরিমাণ কারেন্ট প্রবাহিত হয়।

আমরা ইতোমধ্যে c ও d এই ২ টি জাংশন পেয়েছি। এখন জাংশন হতে আমাদের সম্ভাব্য পথগুলো বের করতে হবে।  যদি  c বিন্দু হতে d বিন্দুতে যেতে চাই তাহলে V1, থেকে R1 পর্যন্ত একটি পথ থাকবে এবং  V2 ও R2 দিয়ে পার হলে এখানে একটি পথ থাকবে আবার, R3 হয়ে গেলে আরেকটি পথ এবং V3 হয়ে গেয়ে আরেকটি পথ পাবো অর্থাৎ, আমারা মোট ৪ টি পথ পাবো। তাহলে বলতে পারি, এই সার্কিটে মোট ব্রাঞ্চ হচ্ছে ৪ টি।

মেশ বের করার উপায়ঃ

লুপ বের করার আগে আমরা মেশ বের করবো তাহলে লুপ বের করতে সুবিধা হবে।

আমরা জানি, মেশ হচ্ছে এমন এক ধরনের লুপ যার ভিতরে অন্য কোন লুপ থাকেনা।

উপরের চিত্র হতে দেখতে পাচ্ছি তিনটি লুপের মধ্যে অন্য কোন লুপ নেই অর্থাৎ এখানে 1, 2 ও 3 এই তিনটি হচ্ছে মেশ।

লুপ বের করার উপায়ঃ

এবার আমরা লুপ সংখ্যা বের করবো-

আমরা ইতোমধ্যে ৩ টি মেশ পেয়েছি। যেহতু প্রত্যেক মেশই লুপ সেহেতু এই ৩ টি মেশও লুপ হবে এবং সেই সাথে সার্কিটে আরো কয়েকটি লুপ থাকতে পারে। তাহলে চলুন দেখা যাক আর কোন লুপ আছে কি না-

সার্কিট হতে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, লুপ 1 ও 2 মিলে একটি লুপ তৈরি হয়েছে। আবার লুপ 2 ও 3 মিলে আর একটি লুপ তৈরি হয়েছে এবং পুরো সার্কিট মিলে আরও একটি লুপ তৈরি হয়েছে।

তাহলে এবার বলতে পারি আমাদের মোট লুপ সংখ্যা হচ্ছে,  ৩+১+১+১= ৬ টি।

নোড, জাংশ, ব্রাঞ্চ, লুপ ও মেশ সমন্ধে আরো সহজভাবে বুঝতে এখনই নিচের ভিডিওটি দেখে নিন-

সার্কিটের উপাদান সমূহ সম্বন্ধে বিস্তারিত পড়ুনঃ

ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট সম্বন্ধে পড়ুনঃ

References:

EEP – Electrical Engineering Portal

Electrical Technology Org

Electrical4u