থ্রি ফেইজ ইন্ডাকশন মোটরের অন্যতম একটি সুবিধা হল এটি সেলফ স্টার্টিং তথা নিজে নিজেই স্টার্ট হতে পারে। যখন মোটরের স্ট্যাটরে থ্রি ফেইজ সাপ্লাই দেওয়া হয়, একটি ঘূর্ণায়মান চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি হয়। তখন রোটর ঘুরতে শুরু করে এবং মোটর স্টার্ট হয়।
ইন্ডাকশন মোটর স্টার্টিং
আমরা জানি ইন্ডাকশন মোটরে যখন পাওয়ার সাপ্লাই দেওয়া হয় শুরুতে অনেক বেশি পরিমাণে কারেন্ট প্রয়োজন হয়, যাকে ইনরাশ কারেন্ট বলা হয়। আর মোটর যদি অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন হয় তাহলে ইনরাশ কারেন্টের জন্য আশেপাশের এলাকার ভোল্টেজ ডাউন হয়ে যেতে পারে এমনকি লো ভোল্টেজের কারণে অনেক যন্ত্রপাতি নষ্টও হয়ে যেতে পারে।
তাছাড়া বিশাল পরিমাণের কারেন্ট কখনো কখনো মোটরের বিভিন্ন যন্ত্রাংশকেও বিকল করে দিতে পারে। তাই এই অসুবিধা গুলোকে কাটিয়ে উঠার জন্য বিভিন্ন মেথড ব্যবহার করা হয়, যাকে ইন্ডাকশন মোটর স্টার্টিং মেথড বলে। এসব মেথডের কাজই হল মূলত মোটর স্টার্টিং এর সময় ভোল্টেজ এবং কারেন্টের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করা। আর এই মেথড গুলি শুধুমাত্র মোটর স্টার্টিং এর ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়, মোটর রানিং এ চলে আসলে তাদের সাথে মোটরের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। প্রচলিত কিছু ইন্ডাকশন মোটর স্টার্টিং মেথডের নাম হলঃ
- অটো-ট্রান্সফরমার স্টার্টিং
- ওয়াই-ডেল্টা স্টার্টিং
- সিরিজ ইমপিডেন্স স্টার্টিং
- সলিড স্টেট স্টার্টিং
- পার্ট ওয়াইন্ডিং স্টার্টিং
অটো-ট্রান্সফরমার স্টার্টিং
অটো-ট্রান্সফরমার স্টার্টিং ওয়াই এবং ডেল্টা ২ ধরণের মোটরেই কাজ করে। এই পদ্ধতিতে মূলত মোটরের স্টার্টিং কারেন্টের পরিমাণ অটো ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে কমিয়ে আনা হয়। নিম্নে এর সার্কিট ডায়াগ্রাম দেওয়া হলঃ
এই মেথডে বেশ কিছু সুইচ ব্যবহার করা হয়। কারন অটো-ট্রান্সফরমার শুধু মাত্র স্টার্টিং এর সময়ই কাজে লাগে এবং তারপর এর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়।
- যখন সবগুলো সুইচের পজিশন 1 এ থাকে তখন মোটরটি অটো-ট্রান্সফরমারের সাথে সংযুক্ত।
- আর যখন মোটর স্টার্ট হয়ে রানিং কন্ডিশনে চলে আসে তখন সুইচের পজিশন 2 তে দেওয়া হয় এবং মোটর সরাসরি পাওয়ার সাপ্লাই এর মাধ্যমে চলে।
- এখানে অটো ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি সাইডে সাপ্লাই ভোল্টেজ দেওয়া হয় এবং সেকেন্ডারি সাইডের সাথে মোটরকে সংযুক্ত করা হয়।
- অটো-ট্রান্সফরমার মোটরের স্টার্টিং ভোল্টেজকে ৩০ থেকে ৫০ ভাগ পর্যন্ত কমাতে সক্ষম।
ওয়াই-ডেল্টা স্টার্টিং
আমরা জানি, ডেল্টা কানেকশনে লাইন ভোল্টেজ এবং ফেইজ ভোল্টেজ সমান থাকে। কিন্তু ওয়াই কানেকশনে,
ফেইজ ভোল্টেজ = লাইন ভোল্টেজ /√3।
এই দুই ধরণের কানেকশনে ফেইজ ভোল্টেজের তারতম্যের উপর ভিত্তি করেই মূলত এই মেথড কাজ করে। একটি ডেল্টা কানেক্টেড ইন্ডাকশন মোটরকে স্টার্টিং এর জন্য এর কানেকশনে কিছুটা পরিবর্তন করে একে ওয়াই কানেকশনে রূপান্তর করা হয়। তারপর মোটর যখন রানিং কন্ডিশনে চলে আসে তখন আবার একে ডেল্টা কানেক্টেড করে দেওয়া হয়। এ পদ্ধতিতে মোটরের স্টার্টিং ভোল্টেজ ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।
সিরিজ ইমপিডেন্স স্টার্টিং
সিরিজ ইমপিডেন্স স্টার্টিং ইন্ডাকশন মোটরের অন্যতম একটি স্টার্টিং মেথড। এই পদ্ধতিতে মোটরের প্রতি ফেইজের সাথে রেজিস্টর অথবা ইন্ডাক্টর সিরিজে লাগানো থাকে। মোটর স্টার্টিং এর সময় সুইচ গুলো এমন ভাবে সংযুক্ত করা হয় যেন কারেন্ট রেজিস্টরের মধ্য দিয়ে গমন করে। আর এর ফলে মোটরের ভোল্টেজ কিছুটা হ্রাস পায়। তারপর আবার মোটরকে সাপ্লাই ভোল্টেজের সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়।
এর সার্কিট ডায়াগ্রাম নিচে দেওয়া হলোঃ
সিরিজ ইমপিডেন্স স্টার্টিং হলো ইন্ডাকশন মোটরের সবচাইতে সহজ এবং সস্তা স্টার্টিং মেথড। আর এই পদ্ধতিতে মোটরের স্টার্টিং ভোল্টেজ ৩০ ভাগ পর্যন্ত কমে যায়।
সলিড স্টেট স্টার্টিং
একটি সলিড স্টেট স্টার্টিং সিস্টেমে মোটরের প্রতিটি ফেইজের সাথে ২টি করে থাইরিস্টর সংযুক্ত থাকে। থাইরিস্টর সমূহ মোটরের ইনরাশ কারেন্টকে প্রতিহত করে। তাছাড়া এর মাধ্যমে কারেন্ট হঠাৎ বৃদ্ধি না পেয়ে আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। নিচে এর সার্কিট ডায়াগ্রাম দেওয়া হলোঃ
সলিড স্টেট স্টার্টিং মেথড শুধুমাত্র স্টার্টিং এর জন্যই নয়, স্পিড কন্ট্রোল, পাওয়ার ফ্যাক্টর কন্ট্রোল, প্রটেকশন ইত্যাদি ক্ষেত্রেও ব্যবহার হতে পারে।
পার্ট ওয়াইন্ডিং স্টার্টিং
পার্ট ওয়াইন্ডিং স্টার্টিং মেথড উপরের সকল মেথড থেকে একটু আলাদা। কারণ এটি ক্ষেত্রে মোটরের ২ সেট থ্রি ফেইজ ওইন্ডিং থাকে। এর সার্কিট ডায়াগ্রাম নিম্নে দেওয়া হলোঃ
স্টার্টিং এর সময় মোটরের 2C সুইচগুলো বন্ধ থাকে এবং শুধুমাত্র 1C সুইচগুলো খোলা থাকে। যার ফলে মোটর স্বাভাবিকের চাইতে অর্ধেক পাওয়ার নিয়ে স্টার্ট হয় এবং স্টার্টিং এর পর আবার ২ টি সুইচই খুলে দেওয়া হয়। এই মেথড ইন্ডাকশন মোটর স্টার্টিং এর অনেক কম দামি একটি পদ্ধতি।
ইন্ডাকশন মোটর সম্পর্কে অন্যান্য লেখা সমূহঃ
ইন্ডাকশন মোটরঃ প্রকারভেদ এবং গঠন
থ্রী ফেইজ ইন্ডাকশন মোটরের কার্যপদ্ধতি