আধুনিক সভ্যতা গড়ে উঠার পিছনে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে বিজ্ঞানের। আর এই বিজ্ঞানের সোনার কাঠি হচ্ছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ বিহীন বর্তমান সভ্যতা হয়ে পড়বে অনুজ্জ্বল, নিথর ও নিষ্প্রাণ। বিদ্যুৎ যেখানে উৎপাদন করা হয় অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বা পাওয়ার প্ল্যান্ট এর বেসিক কিছু বিষয় নিচে তুলে ধরা হলো।
- পাওয়ার প্ল্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কি?
- পাওয়ার প্ল্যান্ট কি?
- পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রকারভেদ।
- পাওয়ার প্ল্যান্টের কার্য পদ্ধতি।
পাওয়ার প্ল্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারিং:
ইঞ্জিনিয়ারিং এর যে শাখায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের বিভিন্ন মেশিন, যন্ত্রপাতি ও স্থান সম্বন্ধে আলোচনা করা হয় তাকে পাওয়ার প্ল্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারিং বলে অর্থাৎ টেকনিক্যাল ব্যাপার থেকে শুরু করে ডেভেলপমেন্ট এবং শেষ পর্যন্ত সকল কিছুই পাওয়ার প্ল্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারিং এর অন্তর্ভুক্ত।
পাওয়ার প্ল্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলা কৌশল সম্বলিত এমন একটি বিষয় যা অধ্যয়নের মাধ্যমে আমরা শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের বিভিন্ন মেশিন ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার, মেরামত, সংরক্ষণ, পরিচালনা ও স্থান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারি। পাওয়ার প্ল্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিদ্যুৎ উৎপাদন, ট্রান্সমিশন, ডিস্ট্রিবিউশন ও এর ব্যবহার সম্পর্কেও আলোচনা করে থাকে।
এছাড়া পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে কম খরচে অধিক মুনাফা অর্জন করাও পাওয়ার প্ল্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারিং-এর আলোচ্য বিষয়।
” ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন লাইনে ব্যবহৃত উপাদান সমূহ পরিচিতি ও তাদের কাজ সম্বন্ধে পড়ুন “
পাওয়ার প্ল্যান্ট কি?
পাওয়ার প্ল্যান্ট বা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বলতে এমন একটি কেন্দ্র বা প্রতিষ্ঠানকে বুঝায় যেখানে যান্ত্রিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা হয়।
অর্থাৎ, যেখানে কতগুলো যন্ত্রের মাধ্যমে শক্তির রূপান্তর ঘটিয়ে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা হয় এবং এই বিদ্যুৎ শক্তিকে প্রয়োজনীয় ধাপ অনুসরণ করে নিকট বা দূর দূরান্তে প্রেরণ করা হয় তাকে পাওয়ার প্ল্যান্ট বা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বলে।
একটি পাওয়ার প্ল্যান্ট সাধারণত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, পাওয়ার স্টেশন, জেনারেটিং স্টেশন বা পাওয়ার হাউজ নামেও পরিচিত।
পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রকারভেদঃ
পাওয়ার প্ল্যান্টের বিভিন্ন দিক বিবেচনায় পাওয়ার প্ল্যান্টকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। নিম্নে প্রচলিত পাওয়ার প্ল্যান্টের কয়েকটি প্রকার উল্লেখ করা হলোঃ
বিভিন্ন শক্তি হতে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরের উপর ভিত্তি করে পাওয়ার প্ল্যান্টকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ
- বাষ্প বিদ্যুৎ কেন্দ্র (Steam Power Plants)
- জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র (Hydro-Electric Power Plants)
- ডিজেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র (Diesel Power Plant)
- পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র (Nuclear Power Plants)
- গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎ কেন্দ্র (Gas Power Plant)
- সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র (Solar Power Plant)।
- উইন্ড (বায়ু) টারবাইন বিদ্যুৎ কেন্দ্র (Wind Turbine Plant)
বাষ্প বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ডিজেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট বলা হয়, কারণ এগুলো তাপকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে।
এছাড়াও লোডের প্রকৃতি ও স্থানের উপর ভিত্তি করে পাওয়ার প্ল্যান্টকে নিম্নোক্ত ভাগেও ভাগ করা হয়। যেমনঃ
লোডের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে পাওয়ার প্ল্যান্টকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ
- বেস্ লোড বিদ্যুৎ কেন্দ্র (Base Load Power Plant)
- পিক লোড বিদ্যুৎ কেন্দ্র (Peak Load Power Plant)
স্থানের উপর ভিত্তি করে পাওয়ার প্ল্যান্টকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ
- কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র (Central Power Plant)
- বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র (Isolated Power Plant)
উপরোক্ত প্রকারভেদ ছাড়াও বিশ্বে বেশ কিছু অপ্রচলিত পাওয়ার প্ল্যান্ট রয়েছে। যেমনঃ
- Thermometric Generator.
- Thermionic generator.
- Fuel-cells Power Plants.
- Photo voltaic solar cells Power System.
- M H D Power Plants.
- Fusion Reactor Power System.
- Bio-gas, Biomass Energy Power system.
- Geothermal Energy.
- Wind Energy Power System.
- Ocean Thermal energy conversion (OTEC).
- Wave and Tidal Wave.
- Energy Plantation Scheme.
পাওয়ার প্ল্যান্টের কার্যপদ্ধতিঃ
পাওয়ার প্ল্যান্টের মূল কেন্দ্রে একটি জেনারেটর থাকে যা পরিবাহক ও চৌম্বক ক্ষেত্রের মাঝে পারস্পরিক গতি সৃষ্টির মাধ্যমে যান্ত্রিক শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্ত্রিত করে। বেশিরভাগ পাওয়ার প্ল্যান্টে এক বা একাধিক জেনারেটর ব্যবহার করে যান্ত্রিক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তর করা হয়।
একটি পাওয়ার প্ল্যান্টে উৎপাদিত বিদ্যুৎ শক্তিকে সুবিধামতো স্টেপ আপ ও স্টেপ ডাউন করে প্রয়োজনীয় কাজ করার জন্য নিকট বা দূর-দূরান্তে প্রেরণ করা হয়। পাওয়ার স্টেশনে জেনারেটরের পাশাপাশি ট্রান্সফর্মার, সুইচ গিয়ার, স্টার্টিং মোটর, কন্ট্রোলিং ইউনিট ইত্যাদি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়।
নিচের চিত্রে একটি সাধারণ পাওয়ার প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ উৎপাদনের কার্যপ্রণালী দেখানো হলোঃ
একটি পাওয়ার স্টেশনে প্রথমত এনার্জি সোর্স বা জ্বালানির সাহায্যে প্রাইম মুভারকে কে ঘুরানো হয়। প্রাইম মুভার তখন অল্টারনেটর বা এসি জেনারেটরকে ঘুরায়। যেহেতু প্রাইম মুভারের শ্যাফট জেনারেটরের শ্যাফটের সাথে কাপলিং করা থাকে সেহেতু প্রাইম মুভার ঘুরলে জেনারেটরও ঘুরতে থাকে। আর এই ঘুর্ণনের ফলেই জেনারেটর হতে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।
একটি পাওয়ার স্টেশনে একটি জেনারেটরকে নির্দিষ্ট ফ্রিকুয়েন্সির জন্য একটি নির্দিষ্ট আর.পি.এম-এ ঘুরানো হয়। এর ফলে জেনারেটরের আউটপুটে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভোল্টেজ উৎপন্ন হয় এবং এই উৎপন্ন ভোল্টেজকে ট্রান্সফর্মারের সাহায্যে স্টেপ আপ বা স্টেপ ডাউন করে জাতীয় গ্রিডে প্রদান করা হয়।
“ইলেকট্রিক্যাল এনার্জির প্রাথমিক উৎসগুলো সম্বন্ধে আলোচনা “
“বিভিন্ন পাওয়ার প্ল্যান্ট ও গ্যাস টারবাইন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা “
“অল্টারনেটর বা এসি জেনারেটর সম্বন্ধে সহজ ভাষায় বিস্তারিত আলোচনা“