ছোটবেলা থেকেই ল্যাপটপ চালু করার পর আমার একটি অভ্যাস ছিল যে ঘন ঘন রিফ্রেশ অপশনে ক্লিক করা। আমার একটি ধারণা ছিল যে, ঘন ঘন রিফ্রেশ করলে হয়তো ল্যাপটপের অপারেটিং স্পীড বাড়বে। ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর আমার এ ধারণা ভূল প্রমাণিত হয়। আমি অনেক ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েটকেও এই কাজটি করতে দেখেছি। এটা করে অনেকে আবার একটা মানসিক তৃপ্তি লাভ করে। তাহলে চলুন আর কথা বা বাড়িয়ে এই রিফ্রেশ অপশনটির রহস্য উদঘাটন করা যাক।
বারবার রিফ্রেশ করলে কি কম্পিউটারের গতি বাড়ে?
র্যাম ও রিফ্রেশের যোগাযোগ
Refresh শব্দটির পোস্টমর্টেম করলে পাওয়া যায় Re + Fresh। অর্থাৎ পুনরায় কাজের উদ্যম খুজে পাওয়া। র্যাম/RAM এর পূর্ণরুপ হল Random Access Memory। ল্যাপটপ যখন অফ থাকে তখন র্যাম ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে। আপনি যখন ল্যাপটপ/ডেস্কটপ চালু করেন তখন র্যাম বাবু জাগ্রত হয় এবং পুরো অপারেটিং সিস্টেম চালু হয়।
বিভিন্ন ডাটা, ফাইলগুলো, প্রোগ্রামগুলো লোড হতে থাকে। এখন রিফ্রেশ অপশানে ক্লিক করলে ল্যাপটপের গতি ত বাড়বেই না বরং আপনি কাজের গতি মন্থর করে দিচ্ছেন। কারণ রিফ্রেশ দিলে আপনার সিস্টেম র্যামে পুনরায় রিলোড হতে শুরু করে। রিফ্রেশের সঙ্গে কম্পিউটারের র্যামের কোনো সম্পর্কই নেই। অর্থাৎ আপনি যতই রিফ্রেশ করুন না কেন, আপনার কম্পিউটারের গতি বৃদ্ধি পাবে না।
মনে করুন, আপনার কম্পিউটারের একটি ফোল্ডারে ৫০টি ভিডিও ফাইল বা পিকচার রয়েছে, এখন আপনি যখন ফোল্ডারটি ওপেন করবেন তখন ভিডিও ফাইল গুলোর থাম্বনেল লোড হতে ও ফোল্ডারটি রেডি হতে একটু সময় লাগবে। এই সময় আপনি যদি রিফ্রেশ করেন, তখন ফাইল গুলোর থাম্বনেল আবার রিলোড হবে, ফলে উইন্ডোজ এক্সপ্লোরার স্লো হয়ে পড়বে।
রিফ্রেশ করে মূলত লাভ কি?
কাজ করতে করতে যখন আপনার মাথা হ্যাং হয়ে যায় তখন আপনি নিশ্চয়ই কফি খেয়ে নিজেকে রিফ্রেশ করে নেন। এতে আপনার মাথা পুনরায় কাজ করতে শুরু করে। তবে তার মানে এ নয় যে আপনার কাজের গতি বেড়েছে। চলুন একটি সুন্দর উপমা দেয়া যাক। মনে করুন, আপনি কোন পিকচার ডিলিট করে দিলেন। কিন্তু পিকচারটি তারপরেও রিসাইকেল বিনে না গিয়ে এখনো ফোল্ডারেই বসে আছে। তখন যদি আপনি রিফ্রেশ অপশন ব্যবহার করেন তাহলে সমাধান মিলতে পারে। তাছাড়াও যেসব কাজে রিফ্রেশ সাহায্য করেঃ
- কোন ফাইল ফোল্ডার তৈরি
- নাম পরিবর্তন
- স্থান পরিবর্তন
- ডেস্কটপ আইকন ঠিকভাবে দেখতে বা আইকন ঠিকভাবে এ্যালাইনমেন্ট করতে
আলোচনা থেকে বুঝতেই পারছেন আপনি এতদিন যা শুনে এসেছেন যে রিফ্রেশ করলে কম্পিউটারে গতি বৃদ্ধি পায় তা আসলে ভূল। তাই ডেস্কটপে বার বার রিফ্রেশ করে কোনো লাভ নেই। উল্টা আপনার পিসিতে যদি কোনো কাজ চলতে থাকে, তাহলে রিফ্রেশের ফলে ঐ কাজের গতি ঐ সময়ের জন্য কিছুটা কমে যাবে, কারন রিফ্রেশ করতেও কিছুটা পাওয়ার দরকার।
পাঠকদের অনেকেই হয়ত আর্টিকেলটি পড়ছেন আর হাসছেন। কারণ আপনিও হয়ত পিসি চালু করেই বার বার রিফ্রেশ করতে পছন্দ করেন। এটি করার পর অনেকের কাছে মনে হতে পারে স্পীড বেড়েছে। এটি মূলত আপেক্ষিক বা মানসিক কিংবা কাকতালীয় ব্যাপার বৈকি কিছুই না। আজকের আর্টিকেলের পর হয়ত আপনাদের এই ভূল আর হবেনা আশা করছি।
আরো কিছু আর্টিকেল
ফেসবুকে ফেইক আইডিধারী অপরাধীকে পুলিশ কিভাবে ট্রেস করে?