একটি প্রশ্নের মুখোমুখি অনেকবার হয়েছি। আজ সেই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হলাম। এই প্রশ্নগুলো অনেক ক্ষেত্রে চাকুরীর ভাইবাতে এসে থাকে।

  1. ভূমিকা
  2. কেন উচ্চ ভোল্টেজে AC সরবরাহ করা হয়?
  3. আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে ১১ কেভি ভোল্টেজ কেন জেনারেট বা উৎপন্ন করা হয়ে থাকে??
  4. ট্রান্সমিশন ভোল্টেজ ৬৬কেভি / ১৩২কেভি / ২৩০ কেভি / ৪০০ কেভি কেন করা হয়???
  5. ডিস্ট্রিবিউশন লাইনে ভোল্টেজ কেন ২২০ ভোল্ট বা ৪৪০ ভোল্ট করা হয়ে থাকে?

ভূমিকা

আপনারা নিশ্চয় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে শুরু করে বাসা-বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবহিত অনেক বড় বড় ট্রান্সফরমার দেখেছেন যেগুলো বিশাল বড় এবং উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন। এই ধরনের ট্রান্সফরমার মূলত হাই ভোল্টেজে অপারেট হয়ে থাকে যেমন ১১কেভি, ৩৩কেভি, ৬৬কেভি,১১০কেভি,১৩২কেভি ইত্যাদি। ১ কিলো ভোল্ট = ১০০০ ভোল্ট তাহলে ১৩২ কিলোভোল্ট = ১,৩২,০০০ ভোল্ট

৩৩ কেভির উপর থেকে মূলত ট্রান্সমিশন লাইনে ব্যবহিত হয়ে থাকে। ৩৩ কেভি বা তার নিচের ভোল্টেজ মূলত ডিস্ট্রিবিউশন লাইনে ব্যবহিত হয় বা বিবেচিত হয়ে থাকে। ট্রান্সফর্মার রেটিং মূলত কেভিএ তে প্রকাশ করা হয় যা আমরা পূর্বের লেখাগুলোতে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ইলেকট্রিক পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম পড়ুন

ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন প্রশ্ন-উত্তর পর্ব-১ পড়ুন

ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন প্রশ্ন-উত্তর  পর্ব-২ পড়ুন

কেন উচ্চ ভোল্টেজে AC সরবরাহ করা হয়?

পাওয়ার এর সূত্র থেকে আমরা জানি P=VI_______________(i)

এখানে, P = Power, V = Voltage, I = Current

অর্থাৎ ভোল্টেজ এবং কারেন্টের গুণফলকে পাওয়ার বলে। কারেন্টের পরিমাণ কমিয়ে ভোল্টেজ বাড়ালেও মোট পাওয়ার সমান থাকবে। আবার কারেন্টের পরিমাণ বাড়িয়ে ভোল্টেজ কমালেও মোট পাওয়ার সমান থাকবে।

কারেন্ট প্রবাহের মাত্রা নির্ভর করে ক্যাবলের ক্ষেত্রফলের উপর। কারেন্ট প্রবাহ যত কম হবে ক্যাবলের ক্ষেত্রফলও তত কম ব্যবহার করা যাবে। আর আমরা জানি ক্যাবলের ক্ষেত্রফল যত কম হবে তার খরচও তত কম হবে।

সুতারাং ট্রান্সমিশন ভোল্টেজ বৃদ্ধি করা হলে এবং কম পরিমাণে কারেন্ট ব্যবহার করলে ট্রান্সমিশন ক্যাবলের খরচ কম পরবে। আমরা জানি, কারেন্ট প্রবাহ কম হলে ট্রান্সমিশন লাইন উত্তপ্ত কম হবে এবং এর ফলে কপার লস(I2R) ও কম হবে।

কপার লস কম হলে লাইনের আড়াআড়িতে ভোল্টেজ ড্রপ ও কম হবে। এই সকল বিষয়ের উপর বিবেচনা করে ট্রান্সমিশন লাইনে পাওয়ার ঠিক রেখে কারেন্ট কমিয়ে ট্রান্সমিশন ভোল্টেজ বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে।

আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে ১১ কেভি ভোল্টেজ কেন জেনারেট বা উৎপন্ন করা হয়ে থাকে??

আপনারা যদি দেখে থাকেন, বাংলাদেশে সকল জেনারেটিং স্টেশন ১১ কেভি ভোল্টেজ উৎপন্ন(জেনারেট) করে থাকে। প্রশ্ন হতে পারে, কেন ১১ কেভি ভোল্টেজ জেনারেট করে থাকে, কেন ৬৬ কেভি, ১৩২ কেভি, ২৩০ কেভি, ৪০০ কেভি করা হয় না???

ট্রান্সমিশন লাইন

আমরা জানি ইলেকট্রিক্যাল ডিজাইন মূলত নির্ভর করে কারেন্ট লেভেল এবং উয়াইন্ডিং এর ইন্সুলেশনের উপর। যদি জেনারেটিং ভোল্টেজ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয় তাহলে জেনারেটরের স্টেটরে বেশি পরিমাণে ইন্সুলেশনের প্রয়োজন পরে। ইন্সুলেশনের পরিমান বাড়ালে অল্টারনেটর সাইজ ও খরচ দুটোই বৃদ্ধি পাবে। নিচের ইকুয়েশন দেখে আমরা আরো পরিষ্কার বুঝতে পারবো

আমরা জানি, জেনারেটিং ভোল্টেজ

E = B*l*v*sinθ__________________________________(i)

B=Flux density of magnetic field

l=Length conductor

v=speed of motor

singθ=Angle between flux and conductor

জেনারেটিং ভোল্টেজ বৃদ্ধি করলে যে ধরনের সমস্যা হতে পারেঃ

(i) নং সমীকরণ থেকে বুঝা যায়, জেনারেটিং ভোটেজ বেশি বাড়াতে চাইলে কন্ডাক্টরের দৈর্ঘ এবং স্পীড বাড়াতে হবে। রোটরের ফ্লাক্স ডেনসিটি বৃদ্ধি করার জন্য বেশি পরিমাণ কারেন্ট এক্সাইটেশন প্রয়োজন। সুতারাং এতে করে জটিলতা বেড়ে যাবে।

জেনারেটিং ভোল্টেজ কমানো হলে যে ধরনের সমস্যা হতে পারেঃ

যদি জেনারেটিং ভোল্টেজ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমানো হয় তাহলে স্টেটরের মাঝে অনেক বেশি পরিমাণে কারেন্ট বৃদ্ধি পাবে। এই কারনে I2R লস হবে এবং বেশি পরিমাণে তাপ উৎপন্ন হবে। এই বেশি তাপকে অপসারন করার জন্য অনেক বড় ধরনের তাপ অপসারণকারী যন্ত্র প্রয়োজন পরবে। এইসব কারনে জেনারটিং স্টেশনের সাইজ এবং খরচ দুটোই বৃদ্ধি পাবে।

এছাড়া ১১ কেভি জেনারেট করতে সবচেয়ে বেশি সুবিধা হয় কারন তারের ওয়াইন্ডিং প্যাঁচ গুলো নির্দিষ্ট আকারের হয় এবং জায়গা ও খরচ কম লাগে।

ট্রান্সমিশন ভোল্টেজ ৬৬কেভি / ১৩২কেভি / ২৩০ কেভি / ৪০০ কেভি কেন করা হয়???

আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি জেনারেশন মূলত ১১ কেভিতে করা হয়। আমাদের অনেকের মাঝে প্রশ্ন থাকে ট্রান্সমিশন ভোল্টেজ কেন ৬৬ কেভি/১৩২কেভি/২৩০কেভি/৪০০কেভি করা হয়ে থাকে। কেন  আরো বেশি বা কম ভোল্টেজ কিংবা অন্য কোন মানের ভোল্টেজ ট্রান্সফার করা হয় না।

ট্রান্সমিশন ভোল্টেজ

ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশনের সকল পদ্ধতি এবং কার্যক্রম একটা পরিকল্পনা মোতাবেক হয়ে থাকে। এখানে কেও চাইলে কম-বেশি ভোল্টেজ ট্রান্সমিশন বা ডিস্ট্রিবিউশন করতে পারবে না। এর বেশ কয়েকটি যোক্তিক ব্যাখ্যা রয়েছে।

ট্রান্সমিশন ইফিসিয়েন্সি বাড়ানোর জন্য বিশাল পরিমাণ পাওয়ার এক স্থান হতে দূরবর্তী স্থানে পাঠানো হয়ে থাকে। এবার একটা সমীকরণ দেখে নিন।

আমরা জানি,

P=√3 VI cosθ

এবার ধরি,

cosθ=0.9

P=1000 MW

V=11 KV

তাহলে I=[P/(√3)*V*cosθ]

I=58.32 KA

যদি V=132 KV হয় তাহলে I=4.85 KVA 

আমরা জানি যত বেশি কারেন্ট তত বেশি মোটা তার ব্যবহার করতে হয়। তাহলে এখান থেকে আমার বুঝতে পারছি যে ১১ কেভিতে ট্রান্সমিশন করলে অনেক বেশি মোটা তার ব্যবহার করতে হবে ও এতে করে অনেক বেশি খরচ বেড়ে যাবে।

বেশি কারেন্ট মানে বেশি কপার লস I2R। আমরা জানি, V=IR, তাহলে এখান থেকে বুঝতে পারছি ভোল্টেজ ড্রপ ও বেশি হবে।

আচ্ছা এবার প্রশ্ন হতে পারে ১১/১৩২কেভি , ১৩২/১১কেভি হয় কিন্তু ১১/১৫০কেভি বা ৩২/১২কেভি হয়না কেন??

তাহলে একটা ক্যালকুলেশন দেখি:

যেহেতু, আমাদের জেনারেশন ভোল্টেজ ১১কেভি, তাহলে ধরুন আমরা ১১ কেভি থেকে ১৩২ কেভিতে নিতে চাচ্ছি। তাহলে টার্ন সংখ্যা লাগবে = 132/11= 12k এবং ইহা একটি ইন্টেজার সংখ্যা বা পূর্ণ সংখ্যা। আর যদি আমরা ১৫০ কেভিতে নেই তাহলে = 150/11=13.64k। আমরা যে মান পেলাম সেটা একটা ভগ্নাংশ বা Fraction value.

ট্রান্সমিশন লাইন

যেখানে উইন্ডিং এর ক্ষেত্রে অনেক ঝামেলা হয়ে থাকে। এই ধরনের সাইজের উইন্ডিং পাওয়া মুশকিল। এই কারণে ১১কেভি/১৩২কেভি করা হয়।

এছাড়া যখন ১১কেভি / ১৩২ কেভি করা হয় তখন প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারী এর মাঝে সহজ হিসাবের মাধ্যমে উইন্ডিং টা সুন্দরভাবে হয়। আর যখন অন্যভাবে করা হয় তখন উইন্ডিং করতে অনেক ঝামেলা হয়।

ট্রান্সমিশন রেশিও এর উপর নির্ভর করে এটার গুণকের হিসাব ও  রয়েছেঃ

যেমন: ১১*২=২২কেভি , ১১*৩=৩৩ কেভি , ১১*৬=৬৬ কেভি , ১১*১২= ১৩২ কেভি পর্যন্ত নিতে পারবে। লক্ষকরলে দেখতে পারবেন এইগুলো সব পূর্ণ সংখ্যা বা ইন্টিজার ভ্যালু। এগুলোর উইন্ডিং হিসাবটা সহজভাবে হয়।

আপনি চাইলে ১১কেভি থেকে ২২৫ কেভি পর্যন্ত নিতে পারবেন তবে সেটা ট্যাপিং এর মাধ্যমে। এটা করা অনেক ঝামেলা ও কষ্টকর তাই সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করে করা হয়।

ডিস্ট্রিবিউশন লাইনে ভোল্টেজ কেন ২২০ ভোল্ট বা ৪৪০ ভোল্ট করা হয়ে থাকে?

এটা মূলত করা হয় ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতির উপর নির্ভর করে। এর কারন হাই ভোল্টেজে ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি তৈরি করা প্রায় অসম্ভব এবং ব্যায়বহুল ও বলা চলে। এছাড়া হাই ভোল্টেজ বাসাবাড়িতে ব্যবহার করাও বিপজ্জনক।

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ইলেকট্রিক পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম পড়ুন

ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন প্রশ্ন-উত্তর পর্ব-১ পড়ুন

ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন প্রশ্ন-উত্তর  পর্ব-২ পড়ুন

কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন বন্ধুরা। আর ভালো লাগলে শেয়ার করবেন 🙂

13 COMMENTS

  1. vai apner write gulo download kora jayna kano? ki vaba download kora jaba jananan

    • ভাই, আমরা আপাতত ওয়েব সাইটে এটা দেই নি। তবে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেজ এবং ফেসবুক গ্রুপে আমরা এই পিডিএফ গুলো শেয়ার করি। আমরা চেষ্টা করবো ওয়েব সাইটেও পিডিএফ গুলো দিতে।

  2. B/Md Shihab Islam

    খুব সুন্দর একটি পোষ্ট।।সবাই কে অবানন্দন। ও শুভেচ্ছা ।।।

    • সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। দোয়া করবেন আমাদের জন্য যাতে সুন্দর পোস্ট উপহার দিতে পারি।

  3. Mirza asif wadud

    Vaiya khub mojar akta topic alochona korlen,, sotti onek kiso shikte parlam…
    Apnak onek donnbad..abong samney arokom topic aro chai…

    • 🙂 জেনে খুব ভালো লাগলো ভাইয়া। চেষ্টা করবো ভবিষ্যতে এমন মজার টপিক নিয়ে আলোচনা করার।

  4. 11KV or 33KV transmission line e phase to phase voltage koto hobe ba measure korte kon equation ta use hobe janaben?

    • √3 dara vag korlei pawa jabe.

  5. How much minimum distance high rise residential building to Typical Transmission line & other’s criteria.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here