অনেকেই বাস্তবে সার্কিট ব্রেকার দেখে থাকবেন। বিশেষ করে যারা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফিল্ডে আছেন তারা এই ডিভাইসটির সাথে বেশ সুপরিচিত। এই ডিভাইসের গায়ে ব্রেকিং ক্যাপাসিটি নামক একটি শব্দের উল্লেখ থাকে যার একক কিলোএম্পিয়ারে লিখা থাকে। আজ এই বিষয়টি নিয়ে আড্ডা জমাতে চাই।
মানবদেহ এবং ব্রেকিং ক্যাপাসিটি
ব্যাপারটিকে মানবদেহের সাথে খুব সুন্দরভাবে তুলনা করা যায়। আমরা জানি, মানবদেহের রক্ত একটি বাফার দ্রবণ। অর্থাৎ আপনি এসিডিক বা ক্ষারীয় খাদ্যদ্রব্য একসাথে খেলেও রক্তের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে না। সেটি নিরপেক্ষ থাকে। কিন্তু তাই বলে যদি আপনি সালফিউরিক এসিড সরাসরি খেয়ে নেন সেক্ষেত্রে মৃত্যু অনিবার্য। আপনার ভেতরে পুরো বটি কাবাব হয়ে যাবে। অর্থাৎ আপনার রক্ত একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় অম্ল বা ক্ষার গ্রহণ করতে পারে। তার উপরে গেলে মহাবিপদ। একইভাবে সার্কিট ব্রেকারও একটি নির্দিষ্ট মাত্রার বিদ্যুৎ প্রবাহ পর্যন্ত আর্ক অবদমন করতে পারে। বিদ্যুৎ প্রবাহ সেই মাত্রার উপরে গেলে সার্কিট ব্রেকারটি নিজেই নষ্ট হয়ে যাবে বা পুড়ে যাবে। সার্কিট ব্রেকারের আর্ক অবদমনের এই নির্দিষ্ট ক্যাপাসিটিই হল ব্রেকিং ক্যাপাসিটি। যার একক সাধারণত kA (Kiloampere).
এখন কোন সার্কিট ব্রেকারের ব্রেকিং ক্যাপাসিটি 10KA বলতে কি বুঝব?
কোন সার্কিট ব্রেকারের ব্রেকিং ক্যাপাসিটি 10kA বলতে বোঝায় সার্কিট ব্রেকারটি তার সংশ্লিষ্ট পাওয়ার সিস্টেমের 10,000 এম্পিয়ার পর্যন্ত বিদ্যুৎ প্রবাহে সৃষ্ট আর্ক অবদমন করে সিস্টেমকে রক্ষা করতে সক্ষম। এর উপরের মাত্রার প্রবাহে এটি শর্ট সার্কিটের সম্মুখীন হবে।
ভ্যাকুয়াম সার্কিট ব্রেকার কি?
যে সার্কিটের ব্রেকার ভ্যাকুয়াম বা শূন্য মাধ্যমে সৃষ্ট আর্ক অবদমন করতে সক্ষম তাকে ভ্যাকুয়াম সার্কিট ব্রেকার বলে।
আর্ক কি?
আর্ক হল এক ধরনের ইলেকট্রিক্যাল ডিসচার্জ যা দুটো পরিবাহী ইলেকট্রোডের মধ্যে সৃষ্টি হয় এবং স্পার্ক তৈরি করে।
আর আর্ক সৃষ্টির দরুণ দুটো ইলেকট্রোডের মধ্যে যে ভোল্টেজ তৈরি হয় তাকে আর্কিং ভোল্টেজ বলে।
এই ব্রেকারটি কোথায় ব্যবহার করা হয়?
সাধারণত 33/11 kV ডিস্ট্রিবিউশন সাবস্টেশনের জন্য এই ব্রেকারটি ব্যবহার করা হয়। তবে এই ব্রেকারের ভোল্টেজ রেটিং 3 থেকে 38 kV পর্যন্ত হয়ে থাকে। ভ্যাকুয়াম সার্কিট ব্রেকারে এক ধরনের চেম্বার থাকে যা ভ্যাকুয়াম ইন্টারাপ্টার চেম্বার নামে পরিচিত।
ভ্যাকুয়াম ইন্টারাপ্টার চেম্বার কি?
যে চেম্বারে বিদ্যুৎ পরিবাহী পাত খোলা, বন্ধ এবং আর্ক অবদমিত হয় তাকে ভ্যাকুয়াম ইন্টারাপ্টার বলে। এটি সিরামিকের আবরণ দেয়া ইস্পাত দিয়ে গঠিত। এর অভ্যন্তরীণ চাপ ১ মাইক্রোবার। এই চেম্বারে তামা এবং ক্রোমিয়ামের পাত থাকে। এই ধাতব পাতের আকৃতি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে। শুরুর দিকে বাট আকৃতির পাত ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে সর্পিলাকার পাত বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ভ্যাকুয়াম সার্কিট ব্রেকারের কার্যপদ্ধতি
ভ্যাকুয়াম সার্কিট ব্রেকারটি যে পাওয়ার সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত সেখানে কোন ফল্ট দেখলে তার ইন্টারাপ্টার চেম্বারের পরিবাহী পাতদুটো একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিচ্ছিন্ন হবার সময় ধাতব অংশ থেকে বাষ্প তৈরি হয়। ধাতব বাষ্পের পোলারাইজেশনের ফলে আর্ক তৈরি হয়। তবে আর্ক উৎপন্ন হওয়ার সাথে সাথে ম্যাজিকের ন্যায় পুনরায় আর্ক প্রশমিত হয়।
কিভাবে ম্যাজিকের মাধ্যমে আর্ক প্রশমিত হয়?
যখন আর্ক উৎপন্ন হয় তখন আয়ন বা ইলেকট্রনগুলো সরে যাওয়া পাতের দুইপাশে অবস্থান করে। যার ফলে ডাইইলেকট্রিক ফিল্ড তৈরি হয়। ফলে আর্ক প্রশমিত হয়ে পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে আসে। এই ক্রোমিয়াম বা তামার পাতদুটোর দূরত্ব নূন্যতম দুই সেন্টিমিটার হলে তা ৩০,০০০ ভোল্ট আর্ক প্রশমন করতে সক্ষম।
ভ্যাকুয়াম সার্কিট ব্রেকারের সুবিধা
- বদ্ধ অবস্থায় আগুনের কোন ঝুঁকি নেই।
- বজ্রপাত সহ্য করতে পারে।
- রক্ষণাবেক্ষণের তেমন প্রয়োজন হয়না এবং নিঃশব্দে কাজ করে।
- ২০ বছর পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
- উৎপন্ন আর্ক অপেক্ষাকৃত কম শক্তির। কোন ক্ষতিকারক গ্যাস তৈরি করেনা
ভ্যাকুয়াম সার্কিট ব্রেকারের অসুবিধা
- ভ্যাকুয়াম সার্কিট ব্রেকারের সাথে প্যারালালে ম্যাগনেটাইজিং কারেন্ট অবদমন যন্ত্র সংযুক্ত করতে হয়।
- ৩৬ কিলোভোল্ট এর উপরে এই সার্কিট ব্রেকার রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে খোলা অবস্থায় রাখলে অগ্নিকান্ড ঘটার সম্ভবনা থাকে।
ভ্যাকুয়াম সার্কিট ব্রেকার প্যানেল খোলা অবস্থায় রাখা ঠিক নয়। কেন?
“ভ্যাকুয়াম” শব্দের অর্থ হল বায়ুশূন্য। তাই খোলা অবস্থায় ভ্যাকুয়াম সার্কিট ব্রেকারে বায়ু প্রবেশ করলে সেই বায়ু উচ্চ ভোল্টেজে আয়নিত হয়ে অগ্নিকান্ড ঘটাতে পারে। তাই ভ্যাকুয়াম সার্কিট ব্রেকার প্যানেল খুব এয়ার টাইট পজিশনে রাখাটা জরুরি।
সার্কিট ব্রেকার নিয়ে আরো কিছু পোস্ট
পাওয়ার গ্রীডের অতন্দ্র প্রহরী SF6 সার্কিট ব্রেকার নিয়ে আলোচনা
অটোরিক্লোজার কি? সার্কিট ব্রেকার ভাল নাকি অটো রিক্লোজার ভাল?