সাবস্টেশন নামটি শুনলেই আমাদের চোখে ট্রান্সফরমার, সার্কিট ব্রেকার, লাইটনিং এরেস্টার প্রভৃতি ডিভাইসের ছবি ভেসে উঠে। কিন্তু এসব ছাড়াও এমন এক জিনিস রয়েছে যা সাবস্টেশনের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। এখন নিশ্চয়ই খুবই কৌতূহল হচ্ছে জিনিসটি সম্পর্কে জানার? চলুন কৌতূহল না বাড়িয়ে জিনিসটি সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। সেই রক্ষাকবচ হল পাথর। এখন নিশ্চয়ই আরো অবাক হচ্ছেন এটা ভেবে যে, পাথর কিভাবে রক্ষাকবচের মত কাজ করবে? কিভাবে পাথর সাবস্টেশনের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে তা উল্লেখ করা হলঃ
সরীসৃপের আক্রমণ হতে রক্ষা
বিভিন্ন ধরনের সরীসৃপ যেমন টিকটিকি, গিরগিটি, ইঁদুর, সাপ ইত্যাদির পাথরে চলাচল কষ্টসাধ্য হওয়ায় সহজে অনুপ্রবেশ করতে পারেনা।
বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা
এসিড বৃষ্টির পানি বিদ্যুৎ পরিবাহী। তাই সাবস্টেশনের সাথে পানির প্রত্যক্ষ সংযোগ ব্যাহত করতে পাথর ব্যবহার করা হয়। ফলে রেজিস্টেন্স অনেক পরিমানে বেড়ে গিয়ে বিদ্যুৎ পরিবাহিতা কমিয়ে আনে।
পাইরিনল তেল থেকে অগ্নিকান্ড ঘটতে বাধা দেয়
সাবস্টেশনে যে ট্রান্সফরমারগুলো ব্যবহৃত হয় সেগুলো সাধারণত উচ্চ রেটিং এর পাওয়ার ট্রান্সফরমার। ট্রান্সফরমারগুলো প্রায় কয়েক এমভিএ থেকে কয়েকশ এমভিএ পর্যন্ত হতে পারে। ওভারলোড অবস্থায় ট্রান্সফরমারগুলো বেশ উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। আগের যুগে বয়স্ক লোকজন মাথা ঠান্ডা করার জন্য যেমন তেল ব্যবহার করত তেমনিভাবে ট্রান্সফরমার গরম হয়ে গেলে কুলিং এর জন্য পাইরিনল তেল ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ইন্সুলেশনের কাজেও এই তেল ব্যবহার করা হয়। মাঝে মাঝে কিছুদিন পর তেল পরিবর্তনের সময় কিছু তেল চুইয়ে মাটিতে পড়ে। যেকোনোভাবে তাতে আগুন লেগে গেলে সাবস্টেশন পুড়ে ছাই হতে বেশি সময় লাগবে না। তাই পাথর ব্যবহার করা হয় যাতে তেল চুইয়ে বেশীদূর যেতে না পারে।
স্টেপ এবং টাচ পটেনশিয়াল থেকে রক্ষা
যারা সাবস্টেশনে জব করেন এটা তাদের কাছে খুবই সুপরিচিত শব্দ। এই দুটি পটেনশিয়াল এর দরুণ কারো মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই টেকনিক্যাল বিষয় গুলো অনেকের জানা না থাকায় অহরহ দূর্ঘটনা ঘটেই চলছে। যারা সাবস্টেশনে জব করেন তারাই ভাল জানেন যে, এটা যেকোন সময় কত বড় জম হয়ে দাড়াতে পারে। যখন সাবস্টেশনে ফল্ট দেখা দেয় কিংবা খুব বড়সড় স্পার্কিং শুরু হয় তখন না জানার কারণে অনেকেই সেখানে বিনা দ্বিধায় বিচরণ করে থাকেন। এটা মোটেও উচিত নয়।
এমতবস্থায় কাছে না ১০ মিটার দূরে থাকলেও আপনি ঢলে পড়তে পারেন মৃত্যুর কোলে। কারণ সাবস্টেশন গ্রাউন্ডিং বা আর্থিং ফল্ট কিংবা লিকেজ এর কারণে সেখানে বিশাল ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হতে পারে। এসময় ১০ মিটার রেঞ্জ পর্যন্ত এরিয়া বিদ্যুতায়িত হবার প্রবল সম্ভবনা থাকে। এমতবস্থায় আপনি যদি রেঞ্জের ভেতরে থাকেন তাহলে আপনার দুই পা সেক্ষেত্রে ইলেক্ট্রোড/পরিবাহীর এর ন্যায় আচরণ করবে। আর দুই পায়ের মধ্যে যে ভোল্টেজ পার্থক্য তৈরি হবে তাকে বলা হচ্ছে স্টেপ পটেনশিয়াল। সরলভাবে বললে দুই পায়ের মধ্যে বিভব পার্থক্য। আবার আপনি ঐ সময় যদি ডিভাইস স্পর্শ করে ফেলেন তখন আপনার হাত & পায়ের মধ্যবর্তী স্থানে ভোল্টেজ সৃষ্টি হবে। যাকে বলা হয় টাচ পটেনশিয়াল। শুধুমাত্র সাবস্টেশন নয়। আবাসিক এলাকায় ইলেকট্রিক্যাল টাওয়ার ফল্ট কিংবা ছিড়ে পড়া তার থেকেও আপনি এটার শিকার হতে পারেন।
এর থেকে বাচার উপায় কি?
যদি কোন কারণে আপনি সেই রেঞ্জ বা পাল্লায় থাকেন ও তারপরেও নিজেকে রক্ষা করতে পারেন শুধুমাত্র bunny jump এর সাহায্যে।
Bunny Jump কি?
এটার বাংলা হল খরগোশের ন্যায় লাফানো। এমনভাবে লাফিয়ে রেঞ্জের বাইরে যেতে হবে যেন পা & হাত ভূমি / সাবস্টেশন fault/affected area পুরোপুরি স্পর্শ না করে। নাহলে touch & step potential আপনার মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
পাথরে ঘাস জন্মাতে পারে না
পাথর ব্যবহারের দরুণ সাবস্টেশনে শুষ্কতা বিরাজ করে। যার ফলে ঘাস, আগাছা জন্মাতে পারে না।
ট্রান্সফরমার রেডিয়েটর থেকে বের হওয়া উত্তাপ শোষণের জন্য
যেহেতু পাথর খুব দ্রুত তাপ শোষণ করতে পারে সেহেতু তা ট্রান্সফরমার রেডিয়েটর থেকে বের হওয়া উত্তাপ সহজেই শোষণ করে। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
টাওয়ার ফুটিং রেজিস্টেন্স বাড়াতে সাহায্য করে
পাথর ব্যবহার করলে টাওয়ারের মেটাল বডি এবং ভূমির মধ্যবর্তী রেজিস্টেন্স অনেক বেড়ে যায়। ফলশ্রুতিতে বিদ্যুৎ প্রবাহ অনেক কম হয় এবং অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
সাবস্টেশন নিয়ে আরো কিছু পোস্ট
সাবস্টেশন সিনক্রোনাইজেশন এবং দলীয় নৃত্যের ছন্দ
কিভাবে বুঝব কোনটি ডিস্ট্রিবিউশন সাবস্টেশন বা গ্রীড সাবস্টেশন ?
সাবস্টেশনে পাওয়ার লাইন ক্যারিয়ার কমিউনিকেশন | Power Line Carrier