পি এল সি / PLC নবীন ছাত্রদের জন্য ভীতির আরেক নাম। এই নামটি শুনলেই যেন তাদের মধ্যে এক ধরনের আতংক এবং ভয় কাজ করে। কিন্তু বাস্তবে পি এল সি কিন্তু ভীতির জিনিস নয়, উপভোগের। তবুও ইচ্ছাশক্তির অভাবে পি এল সি কোর্স অনেক ছাত্রদের অধরাই থেকে যায়। তাই আমি আপনাদের পি এল সি এবং তাকে প্রোগ্রামিং করার সহজ উপায়গুলো বিভিন্ন আর্টিকেলের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করব। যদিও এটি একটি প্র্যাক্টিক্যাল বিষয়, তবুও আর্টিকেলের মাধ্যমে কিছুটা হলেও ধারণা হবে। কথায় আছে নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল।
এই আর্টিকেলে আমি বেশি কথায় যাব না। শুধুমাত্র পি এল সি এর ব্যাসিক কনসেপ্ট টা শেয়ার করব। যদিও বিভিন্ন গ্রুপে সিনিয়র প্রকৌশলী ভাইদের সুবাদে এ ব্যাপারে আপনারা অবগত আছেন, তারপরেও আমি একটু ইউনিক স্টাইলে বিষয়টি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব আজ। সর্বপ্রথম পি এল সি এর সংজ্ঞাটা জেনে আসা যাক।
পি এল সি / PLC কি?
সংজ্ঞা জানার আগে তার পূর্ণরুপ টা জেনে নেয়া যাক। PLC এর পূর্ণরুপ হল Programable Logic Controller। নাম শুনেই আন্দাজ করা যাচ্ছে এই মহাশয়ের কাজ কি? প্রথম শব্দ হল Programable। তার মানে হল এই ডিভাইসটি আপনার হুকুমের গোলাম। আপনি তাকে যেভাবে ইন্সট্রাকশন দিবেন সেটি সেভাবেই কাজ করবে। পরের শব্দ হল Logic। এর অর্থ হল এটি আপনার প্রদত্ত ইনপুটের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে যে তার আউটপুট ন্যাচার কিরকম হবে? সর্বশেষ শব্দ হল কন্ট্রোলার। সহজ ভাষায় নিয়ন্ত্রণকারী। এটি কি নিয়ন্ত্রণ করবে? আউটপুটকে নিয়ন্ত্রণ করবে।
আচ্ছা পুরো বিবরণটাকে যদি এক কথায় নিয়ে আসি তাহলে কি বলা যায়?
পি এল সি হল এমন একটি প্রোগ্রামএবল ডিভাইস যা আপনার জুড়ে দেয়া প্রোগ্রামের এবং ইনপুট সিগন্যালের ভিত্তিতে ডিসিশন নিয়ে আউটপুটকে নিয়ন্ত্রণ করবে।
পি এল সি / PLC কিভাবে কাজ করবে?
পিএলসি সাধারণত মাইক্রোপ্রসেসর নিয়ে গঠিত যাকে কম্পিউটারের সাহায্যে প্রোগ্রাম করতে হয়। প্রোগ্রামটি মূলত কম্পিউটারের সফটওয়্যারে লিখতে হয় এবং তা ক্যাবলের সাহায্যে পিএলসিতে লোড করা হয়। মানুষ যেমন মস্তিষ্ক খাটিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় তেমনিভাবে মাইক্রোপ্রসেসর হল পি এল সি এর মস্তিষ্ক যার সাহায্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
পি এল সি তিনটি প্রধান সেকশন রয়েছেঃ
- পাওয়ার সাপ্লাই
- ইনপুট/আউটপুট
- সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট
মনে করুন, আপনি একটি বিয়ের অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করলেন। তিনজনের মধ্যে একজনকে প্রধান করলেন যে কমিটিকে লিড দিবে। উপরে উল্লেখিত তিনটি অংশও একইভাবে পি এল সি ফাংশন পরিচালনা করবে যেখানে কমিটি প্রধান হল সি পি ইউ / প্রসেসর।
এই সি পি ইউ আবার আপনার নির্দেশনা / লজিক প্রোগ্রাম অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করবে যেমনটি কমিটি প্রধান অনুষ্ঠানের মূল আয়োজকের নির্দেশনা মোতাবেক চলে থাকে। আপনি লজিক প্রোগ্রাম যেভাবে সেট আপ করবেন পি এল সি সেই মোতাবেক আউটপুট সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করবে।
পি এল সি এর জন্য কি পরিমাণ পাওয়ার সাপ্লাই লাগবে?
বিভিন্ন পিএলসির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পাওয়ার কম বেশি হতে পারে। যেমন অনেক পি এল সি আছে যাদের অপারেট করতে ১১৫ ভোল্ট থেকে ২৪০ ভোল্ট এসি / ডিসি প্রয়োজন হয়। আবার অনেক পিএলসি রয়েছে শুধু ডিসি ২৪ ভোল্টে অপারেট করা যাবে।
PLC এর কিছু জনপ্রিয় ব্র্যান্ড
বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানির পি এল সি বাজারে রয়েছে। তবে এদের মধ্যে কিছু পরিচিত পি এল সি এর তালিকা নিচে দেওয়া হলো।
- ডেল্টা পিএলসি
- এলেন ব্র্যাডলি
- মিটসুবিশি (Mitsubishi)
- ফুজি
- হিটাছি
- এল জি
- মেডিকন
- টশিবা
- সিমেন্স
এদের মধ্যে বহুল পরিচিত হলো “সিমেন্স”। বেশিরভাগ জায়গায় সিমেন্স নিয়ে কাজ করতে দেখা যায়।
আজ এতটুকুই থাক। আগামী আর্টিকেলগুলোতে আপনাদেরকে পি এল সি প্রোগ্রামিং সফটওয়্যার, কিভাবে প্রোগ্রামিং করবেন সেসব নিয়ে আলোচনা করা হবে ইনশাল্লাহ।
আরো কিছু আর্টিকেল
পি এল সি (PLC) নিয়ে সহজ ভাষায় আলোচনা | পি এল সি ভীতির নয়, উপভোগের জিনিস
কিভাবে পুশ সুইচ ম্যাগনেটিক কন্টাক্টরের সাথে ওয়্যারিং করতে হয়? | অন-অফ পুশবাটন সুইচ
রিলে কন্ট্রোলিং ডায়াগ্রাম । ল্যাচিং সিস্টেম । পুশ বাটন সুইচ আলোচনা