জাহাজ ও উড়োজাহাজের আর্থিং সিস্টেম আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয়বস্তু। আর্থিং ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেমে ব্যবহৃত ডিভাইসগুলোর জন্য একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা এ কথাটি কারোই অজানা নয়। সাধারণত ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইসে বজ্রপাতজনিত কারণে বা শর্ট সার্কিট হলে অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহ ভূমিতে পৌঁছে দেয়ার জন্য আর্থিং ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই একটি মেটালিক রড বা ক্যাবল ভূমিতে সংযোগ করা থাকে।
কিন্তু সাগর কিংবা আকাশে আর্থিং ব্যবস্থা কিভাবে করা হয়? জাহাজ বা উড়োজাহাজের কি তাহলে বৈদ্যুতিক সুরক্ষা দরকার নেই? উত্তরে বলব অবশ্যই আছে। কিন্তু কিভাবে ভূমি থেকে ৩৫০০০ ফুট উপরে বা সুগভীর সাগরে এই সুরক্ষা ব্যবস্থা করা থাকে সে নিয়েই আজকের আলোচনা।
জাহাজ ও উড়োজাহাজের আর্থিং সিস্টেম
উড়োজাহাজের আর্থিং সিস্টেম
একটা কথা জেনে রাখা ভাল, আর্থিং বা গ্রাউন্ডিং যে সর্বদাই ভূমিতে আবদ্ধ থাকবে এই কথাটির কোন ভিত্তি নেই। নাম শুনেই আমরা অনেকে অনুমান করে থাকি যে, আর্থিং তারটি ভূমিতে সংযুক্ত থাকবে। এটি মূলত সেই বৈদ্যুতিক ক্যাবলকে নির্দেশ করছে যার রোধ বা ইম্পিড্যান্স খুবই নগণ্য। প্রায় শূন্যের কাছাকাছি যেন শর্ট সার্কিট ফল্ট দেখা দিলেই অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহ এই অল্প রোধবিশিষ্ট ক্যাবলের মধ্য দিয়ে চলে যেতে পারে। এটিকে অতিরিক্ত কারেন্টের জন্য একটি শর্টকাট পথ বলা যেতে পারে। তাই বুঝতেই পারছেন এই সিস্টেম কতটা জরুরি। এই সিস্টেম ব্যতীত আপনার ব্যবহৃত ডিভাইসটি পুড়ে ফ্রাই হয়ে যেতে পারে অথবা আপনি তড়িতাহত হতে পারেন।
কথা না বাড়িয়ে সরাসরি মূল পয়েন্টে আসা যাক। উড়োজাহাজের ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক সিস্টেম মূলত উড়োজাহাজের মেটাল বডির মাধ্যমেই আর্থ করা হয়ে থাকে। উড়োজাহাজ ম্যানুফেকচারিং কোম্পানিগুলো সাধারণত এলুমিনিয়াম দিয়ে উড়োজাহাজের মেটাল সারফেস তৈরি করে থাকে। আর আমরা জানি, এলুমিনিয়ামের বিদ্যুৎ পরিবাহিতা অনেক বেশি। যখন উড়োজাহাজের ইলেকট্রিক্যাল প্যানেলে কোন ফল্ট হবে তখন অতিরিক্ত কারেন্ট উড়োজাহাজের মেটাল বডিতে পৌঁছে যায় এবং ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেমটি সুরক্ষিত থাকে। অধিকাংশ উড়োজাহাজে স্ট্যাটিক ডিসচার্জার বা স্ট্যাটিক উইক ডিজাইন করা থাকে যা অতিরিক্ত ইলেকট্রিক্যাল চার্জকে মুক্ত বাতাসে ডিসচার্জ করতে পারে।
উড়োজাহাজের আর্থিং সিস্টেমকে আরো ভালভাবে বোঝার জন্য আপনি উড়োজাহাজের উপর বজ্রপাতের ঘটনাকে কল্পনা করতে পারেন। মনে করুন, আপনি মেঘাচ্ছন্ন দিনে প্লেনে করে দুবাই যাচ্ছেন। হুট করে উড়োজাহাজের উপর বজ্রপাত পতিত হল। বজ্রপাত হতেই পারে। বিভিন্ন কোম্পানির প্লেনের পাইলটদের ভাষ্যমতে প্রতি তিন হাজার ঘন্টায় একবার বজ্রপাত হবেই। তাহলে এখন উপায় কি? বজ্রপাত হলেও আপনি শুধু আলো আর শব্দ হয়ত বুঝতে পারবেন কিন্তু আপনি এবং আপনার সহযাত্রীদের কোন ভয়ের কারণ নেই। কারণ প্লেনের ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেমটি তখনও থাকবে সুরক্ষিত। বজ্রপাতের ফলে অতিরিক্ত চার্জ প্লেনের মেটাল বডি লুফে নিবে এবং স্ট্যাটিক ডিসচার্জারের মাধ্যমে তা পরিবেশে ডিসচার্জ করবে।
জাহাজের আর্থিং সিস্টেম
আশা করি উড়োজাহাজের ক্ষেত্রে আর্থিং এর ব্যাপারটি এখন অনেকটাই ক্লিয়ার। এবার তাহলে জাহাজের ক্ষেত্রে কি হবে? এক্ষেত্রেও কি একই সিস্টেম প্রযোজ্য হবে? হ্যা, এক্ষেত্রেও অনেকটা এক রকম। সাধারণত জাহাজের “হাল” হল একটি উত্তম মেটাল বডি। অনেকেই হয়ত “হাল” শব্দটির সাথে পরিচিত নয়। ”হাল” হল জাহাজের বাহ্যিক কাঠামো যা ওয়াটার সারফেসে ভাসতে থাকে।
জাহাজ ম্যানুফেকচারিং কোম্পানিগুলো এই ”হাল” এলুমিনিয়াম বা লোহার মাধ্যমে তৈরি করে। সাধারণত জাহাজের ইলেকট্রিক্যাল প্যানেল, রেডিও ও ইলেকট্রনিক সিস্টেমের অতিরিক্ত কারেন্ট এই হাল নামক অংশটি লুফে নেয় এবং সমুদ্রের পানিতে ডিসচার্জ করে। কারণ আমরা জানি, সমুদ্রের লবণাক্ত পানি বিদ্যুৎ পরিবাহী। তাই এক্ষেত্রে সমুদ্রের পানি পরিবাহীর ন্যায় কাজ করবে।
এভাবেই মূলত জাহাজ এবং উড়োজাহাজের আর্থিং সিস্টেম ডেভেলাপ করা থাকে। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক ভাল লেগেছে। এই মাসে আরো চমকপ্রদ আর্টিকেল আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে। অপেক্ষায় থাকুন।
আরো কিছু আর্টিকেল
আর্থিং ক্যাবল সিলেকশনের ফর্মূলা এবং প্রক্রিয়া