টাইটেল দেখেই মনে মনে হয়ত ভাবছেন, “দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে?” এই কমিশনিং শব্দটি প্রায়শ আমরা শুনে থাকি। স্পেশালি যারা পাওয়ার সাবস্টেশনে জব করেন তাদের কাছে এ আর নতুন কি? আজকে আমি আপনাদের সাথে সাবস্টেশন কমিশনিং নিয়ে গল্প করতে চাই।
কিছুদিন আগেই এক বড় ভাইয়ের সাথে দেখা যিনি পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি অব বাংলাদেশে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছেন। অনেকদিন পর দেখা। তাই বড় ভাই দুপুরে লাঞ্চ করাতে চাইল। আমাদের এলাকার সেরা রেস্তোরায় আমরা লাঞ্চের জন্য গেলাম। খাবার অর্ডার করলাম। খাবার সার্ভ হতে ঘন্টাখানেক দেরি হবে। ত আমি ভাবলাম ভাই ২৩০/১৩২ কেভি গ্রীডে কাজ করেন। উনার থেকে কিছু জানতে পারলে ভাল হবে। ভাবতে লাগলাম কি নিয়ে ভাইয়ের সাথে আলোচনা জমানো যায়?
তখন দেখলাম ফেসবুকে এক ইঞ্জিনিয়ার ভাই সাবস্টেশন কমিশনিং নিয়ে কিছু পিক আপ্লোড করল। তাই এই টপিকটি মাথায় এসে গেল। আর টপিকটি নিয়ে ভাইয়ের সাথে আড্ডা জমালাম। আমাদের আড্ডার মূল সারাংশ আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে তুলে ধরব। চলুন শুরু করা যাক।
সাবস্টেশন কমিশনিং কি?
কমিশনিং বলতে বোঝায় সাবস্টেশনের সরঞ্জামসমূহ যেমনঃ ট্রান্সফরমার, সুইচগিয়ার সিস্টেম (রিলে, সার্কিট ব্রেকার, অটো-রিক্লোজার), টাওয়ারগুলোর ইন্সুলেশন কতটুকু কার্যকরী অবস্থায় আছে তা তদন্ত করা এবং এগুলো কার্যকরী না হলে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা। কমিশনিং-এর পর সরেজমিন রিপোর্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হয়। সাধারণত প্রতি বছর শেষে সাবস্টেশনের ইকুইপমেন্টগুলো কমিশনিং এবং রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। অনেকক্ষেত্রে ছয় মাস পর পর ও হয়ে থাকে।
230/132 kV সাবস্টেশন কিভাবে কমিশনিং করা হয়?
সাধারণত 230/132 kV সাবস্টেশনগুলো হল পাওয়ার গ্রীড সাবস্টেশন। জেনারেটরের মাধ্যমে তৈরিকৃত ভোল্টেজকে স্টেপ আপ করে এক্সট্রা হাই ভোল্টেজে রুপান্তরিত করা হয়ে থাকে। দূর দূরান্ত, নদী, পাহাড় পার হয়ে তারপর হাই ভোল্টেজ লাইনগুলো গ্রীডে প্রবেশ করে। ভোল্টেজের মাত্রা অধিক হলে এই ভোল্টেজকে কয়েক ধাপে স্টেপ ডাউন করা হয়ে থাকে। সাধারণত 230 kV ট্রান্সমিশন ভোল্টের জন্য দুই স্টেপে গ্রীড সাবস্টেশন ব্যবহার করা হয়। প্রথম ধাপ হল, 230 kV কে 132 kV তে রুপান্তরিত করে নেয়া। অতঃপর 132 kV কে আবার 33 kV তে পরিণত করা হয়।
230/132 kV সাবস্টেশন কমিশনিংকালে যেসব পরীক্ষা অবশ্যই করতে হবেঃ
ট্রান্সফরমারের ইন্সুলেশন টেস্ট
গ্রীড সাবস্টেশনের 230/132 kV ট্রান্সফরমারটির ইন্সুলেশন পরীক্ষা করে নিতে হবে। কারণ বৃষ্টিপাত, কুয়াশা বা আর্দ্রতাজনিত কারণে ট্রান্সফরমারের ইন্সুলেশন নষ্ট হয়ে যায়। তাই ট্রান্সফরমারের বুশিং, প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি সাইডের উইন্ডিং এর ইন্সুলেশন পরীক্ষা করে নিতে হবে। এই টেস্টকে ট্যান ডেল্টা টেস্টও বলা হয়ে থাকে। আমাদের ব্লগে ট্রান্সফরমারের ইন্সুলেশন টেস্ট এই আর্টিকেলে এ ব্যাপারে সহজ ভাষায় আলোচনা করা হয়েছে।
লাইটনিং এরেস্টারের কার্যকারিতা যাচাই
লাইটনিং এরেস্টার সাবস্টেশনের একটি জরুরি ডিভাইস। হাই পাওয়ার ইকুইপমেন্টগুলোকে বজ্রপাত থেকে রক্ষা করতে এই লাইটনিং এরেস্টারের ভূমিকা অপরিসীম। লাইটনিং এরেস্টার ঠিক আছে কিনা তার পরীক্ষা করে নেয়া উচিত।
কারেন্ট ট্রান্সফরমার এবং পটেনশিয়াল ট্রান্সফরমারের পরীক্ষা
হাই ভোল্টেজ এবং কারেন্ট মেজারিং ডিভাইস CT এবং PT এর কয়েলের কার্যকারিতা ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে।
SF6 সার্কিট ব্রেকারের পরীক্ষা
পাওয়ার গ্রীড সাবস্টেশনগুলোতে সাধারণত SF6 সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ব্রেকারটির কন্ট্যাক্ট, ইনলেট এবং আউটলেট গ্যাস চেম্বার, গ্যাসের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে নেয়া উত্তম।
টাওয়ারের বডি রেজিস্ট্যান্স পরীক্ষা
টাওয়ারের বডি রেজিস্ট্যান্স পরীক্ষা করে নেয়া উচিত। এতে করে শর্ট সার্কিট দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
আলোচনা করতে করতে অবশেষে আমাদের খাবার চলে এসেছিল। বাইরে ঝুম বৃষ্টি আর টেবিলের উপর কাচ্চি বিরিয়ানি। দিনটা বেশ অস্থির ছিল।
আরো কিছু আর্টিকেল
৫০ কেজি ওজনের কম ব্যক্তি কেন সাবস্টেশনে প্রবেশ করতে পারেনা?