ইনসুলেটর অকেজো হওয়ার কারণসমূহ | Causes of insulator failure

এই লেখাতে আমরা ইনসুলেটর ফেইলুর বা অকেজো হবার কারণ সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করব।

সাধারণত একটি ইনসুলেটর সম্ভাব্য অনেকগুলো কারণে অকেজো বা কাজ করতে ব্যর্থ হতে পারে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ হলোঃ

১. ইনসুলেটর ভেঙ্গে গেলে বা ফাটল ধরলে।
২. সঠিক ইনসুলেটিং উপাদান ব্যবহার না করলে।
৩. ইনসুলেটরে ফ্লাশ ওভার ঘটলে।
৪. ইনসুলেটরে যান্ত্রিক পীড়ন বেশি হলে।
৫. ইনসুলেটরে শর্ট সার্কিট হলে।
৬. ইনসুলেটরের ওপরে ময়লা ও ধুলােবালি জমলে।
৭. ইনসুলেটরের বহিরাবরণ অমসৃণ ও অপর্যাপ্ত
চকচকে হলে।

এবার আসুন আমরা এসব কারণ সম্বন্ধে একটু বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি-

১. ইনসুলেটর ভেঙ্গে গেলে বা ফাটল ধরলেঃ

ইনসুলেটর অকেজো হবার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি প্রধান কারণ হলো ক্র্যাকিং বা ভেঙ্গে যাওয়া। একটি ইনসুলেটর সাধারণত তিনটি উপাদান নিয়ে তৈরি হয়, এগুলি হলোঃ

  • Porcelain body (পোর্সিলিন বডি)
  • Steel arrangement (স্টিল বিন্যাস)
  • Cement (সিমেন্ট)

বিভিন্ন ঋতুতে ঠান্ডা, গরম বা আদ্রতার কারণে পোর্সিলিন (চীনা মাটি) বডি, সিমেন্ট ও স্টিল প্রসারিত (expand) হতে পারে। এসব যখন অস্বাভাবিকভাবে প্রসারিত হয়ে যায় তখন ইনসুলেটরে ফাটল দেখা দেয় বা ভেঙ্গে অকেজো হয়ে যায়।

ইনসুলেটর
ভাঙ্গা ও ফাঁকা ইনসুলেটর

এছাড়া ইনসুলেটরের ভিতরের ইনসুলেটর পিন অথবা সংযােগের ধাতব অংশের সংকোচন ও প্রসারণের কারণেও ইনসুলেটরে ফাটল দেখা দিতে পারে বা ভেঙ্গে যেতে পারে।

২. সঠিক ইনসুলেটিং উপাদান ব্যবহার না করলেঃ

ইনসুলেটর তৈরিতে যে উপাদান ব্যবহার করা হয় তা যদি ভেজাল মিশ্রিত হয় তাহলে ইনসুলেটর খুব সহজেই অকেজো হয়ে যেতে পারে। এছাড়া ইনসুলেটর তৈরির সময় কম ফায়ারিং করে তৈরি করলে ইনসুলেটরের গায়ে ঝাঁজর আকৃতির ছোট ছোট ছিদ্র (Porous) দেখা দিতে পারে। পরবর্তীতে বৃষ্টি বা শিশির পড়লে এই ছিদ্রগুলাে জলীয়বাষ্প শােষণ করে ইনসুলেটরের রেজিস্ট্যান্স ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। এর ফলে ইনসুলেটরে কারেন্ট লিকেজ দেখা দেয় ও পাংচারের কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং এক সময় ইনসুলেটরের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে অকেজো হয়ে যায়।

৩. ইনসুলেটরে ফ্লাশ ওভার ঘটলেঃ

ইনসুলেটরে ফ্লাশ ওভার ঘটলেও ইনসুলেটর অকেজো হয়ে যেতে পারে। ইনসুলেটরে যখন ফ্লাশ ওভার দীর্ঘস্থায়ী হয় তখন ইনসুলেটর অস্বাভাবিক গরম হয়ে যায়, যার ফলে ইনসুলেটর অকেজো হয়ে যায়। বর্তমানে ইনসুলেটরকে ফ্লাশ ওভার থেকে রক্ষা করতে হর্ণ বা রিং ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ইনসুলেটর
পিন ইন্সুলেটর ফ্লাশওভার অবস্থায়

৪. ইনসুলেটরে যান্ত্রিক পীড়ন বেশি হলেঃ

ইনসুলেটরের গঠনগত ত্রুটি – বিচ্যুতি থাকলে বা ইনসুলেটিং পদার্থের গুণগত মান নিম্ন মানের হলে সেসব ইনসুলেটর যান্ত্রিক পীড়ন বেশি সহ্য করতে পারে না। তা ছাড়া ভালাে ইনসুলেটরেও অনেক সময় কন্ডাকটরের দোলন ভরের কারণে যান্ত্রিক পীড়ন বৃদ্ধি পায়, যার ফলে ইনসুলেটর ভেঙ্গে বা ফেঁটে যেতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত ভরের চাপেও ইনসুলেটর পিন বেঁকে যায়।

৫. ইনসুলেটরে শর্ট সার্কিট হলেঃ

অনেক সময় বড় বড় পাখি ইনসুলেটরে বাঁধা কন্ডাকটর ও ক্রস আর্মের মধ্যে শর্ট সার্কিটের সৃষ্টি করে থাকে। এই শর্ট সার্কিটের কারণে ইনসুলেটর নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সাধারণত পিন ইনসুলেটরের ক্ষেত্রেই এই ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। তবে এক্ষেত্রে ইনসুলেটর ও ক্রস আর্মের কাছাকাছি বার্ড গার্ডস (Bird guards) বসানো হলে এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

৬. ইনসুলেটরের ওপরে ময়লা ও ধুলােবালি জমলেঃ

যদি ইনসুলেটরের গায়ের প্রলেপ অনেক পুরানো বা নিস্তেজ (Dull) হয়ে যায় অথবা সঠিকভাবে চকচকে করা না থাকে, তবে এই ইনসুলেটরের গায়ে পানি, ধুলােবালি, ময়লা ইত্যাদি জমতে থাকে। এগুলো জমে থাকলে ইনসুলেটরে আংশিকভাবে ফ্লাশ ওভারের সৃষ্টি হয়ে থাকে, যা ইনসুলেটরকে অকেজো করে দেবার জন্য যথেষ্ট। ভালাে ইনসুলেটরেও এই ময়লা জমতে পারে। এজন্য মাঝে মাঝে রুটিন চেকের সময় ধুলাবালি পরিষ্কার করে দিতে হয় ও চকচকে পদার্থ অনুজ্জ্বল হয়ে গেলে ঐ ইনসুলেটর চেঞ্জ করে দেওয়া হয়।

৭. ইনসুলেটরের বহিরাবরণ অপর্যাপ্ত চকচকে ও অমসৃণ হলেঃ

ইনসুলেটর তৈরির সময় ইনসুলেটরের বাইরের আবরণ অপর্যাপ্ত মসৃণ থাকলে বা প্রলেপ লেপন অনুপযুক্ত হলে আগের মতােই বাতাসের জলীয়বাষ্প, ময়লা, ধুলাবালি, লবণ জাতীয় পদার্থ ইত্যাদি ইনসুলেটরের গায়ে জমে যেতে পারে। পরবর্তীতে এ সমস্ত ময়লা জমতে জমতে ইনসুলেটরে ফ্লাশ ওভার ঘটিয়ে ইনসুলেটরকে অকেজো করে ফেলে।

এ সম্পর্কিত অন্যান্য লেখাঃ

ইনসুলেটর কি, উপাদান, বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ

লাইন সাপোর্ট কি, বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ।

ওভারহেড লাইনের উপাদানসমূহ।