ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট – বিভিন্ন চাকরির ভাইভা ও লিখিত পরিক্ষায় ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট হতে অনেক প্রশ্ন করা হয়। এছাড়া ইলেকট্রিক্যালের স্টুডেন্ট হিসেবে ইলেকট্রিক সার্কিট সমন্ধে ভালোভাবে জানা খুবই জরুরী। এই লেখাটিতে যেসমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবেঃ
- ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট কি?
- আদর্শ সার্কিট
- সার্কিটের প্রকারভেদ
- ওপেন সার্কিট
- ক্লোজড সার্কিট
- শর্ট সার্কিট
- সিরিজ সার্কিট
- প্যারালাল সার্কিট
- সিরিজ- প্যারালাল সার্কিট
১। ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট কি?
যে মাধ্যমে বা যে পথ দিয়ে সহজেই বিদ্যুৎ চলাচল করে লোডের মধ্যে দিয়ে তার কার্য সম্পাদন করে ও অন্য একটি পথে ফিরে আসতে পারে তাকে ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট বলে।
অর্থাৎ বিদ্যুৎ চলাচলের সম্পূর্ন পথকে ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট বলে।
২। আদর্শ সার্কিট
একটি আদর্শ সার্কিটে ৫ টি কম্পোনেন্ট বা উপাদান থাকে। যদি কোন সার্কিটে এই ৫ টি কম্পোনেন্ট বা উপাদানসমূহ থাকে তখন সেই সার্কিটকে আদর্শ সার্কিট বলা হয়।
আসুন আলোচনার মাধ্যমে ৫ টি কম্পোনেন্টকে জানার চেষ্টা করিঃ
একটি আদর্শ সার্কিটে অবশ্যই একটি বৈদ্যুতিক সোর্স থাকতে হবে সেটা জেনারেটর থেকে হোক বা ব্যাটারি থেকেই হোক। এরপরে লাগবে একটি পরিবাহী তার যার মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হবে।
সার্কিটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্ট হচ্ছে বৈদ্যুতিক লোড। একটি সার্কিটে অবশ্যই একটি লোড বা রেজিস্টেন্স থাকতে হবে যেমন- বাতি, পাখা, মটর ইত্যাদি।
এই লোডকে কন্ট্রোল করার জন্য বা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (যেমন- সুইচ) থাকবে।
এছাড়া এই পুরো সার্কিটকে রক্ষা করার জন্য একটি রক্ষন যন্ত্র (যেমন- ফিউজ, সার্কিট ব্রেকার) থাকতে হবে।
উপরের আলোচনা হতে আমরা জানতে পারলাম একটি আদর্শ সার্কিটে ৫ টি কম্পোনেন্ট থাকে এবং সেগুলো হচ্ছেঃ
- বৈদ্যুতিক সোর্স বা উৎস (power supply)
- পরিবাহী তার (conductor)
- বৈদ্যুতিক লোড (load)
- নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা সুইচ (switch)
- রক্ষণ যন্ত্র (controlling device/ fuse)
৩। সার্কিটের প্রকারভেদ
অবস্থানভেদে সার্কিট তিন প্রকার, যথা-
- ওপেন সার্কিট
- ক্লোজড সার্কিট
- শর্ট সার্কিট
৪। ওপেন সার্কিটঃ
যেসব বৈদ্যুতিক সার্কিটের কোন অংশ খোলা বা বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে বিদ্যুৎ চলাচল করতে পারে না সেসব সার্কিটকে ওপেন সার্কিট বলে।
ওপেন সার্কিটে বিদ্যুৎ বৈদ্যুতিক সোর্সের এক টার্মিনাল হতে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে অন্য টার্মিনালে আর ফিরে আসতে পারেনা।
৫। ক্লোজড সার্কিটঃ
যে সার্কিটের কোন অংশ খোলা বা বিচ্ছিন্ন থাকেনা এবং সার্কিট পূর্ণ করে তার মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ চলাচল করতে পারে সে সার্কিটকে ক্লোজড সার্কিট বলে।
৬। শর্ট সার্কিটঃ
যখন কোন কারনে বিদ্যুৎ তার নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত না হয়ে কোন ত্রুটির কারণে সোর্সের এক টার্মিনাল থেকে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত পথে অন্য টার্মিনালে ফিরে আসে তখন তাকে শর্ট সার্কিট বলে।
কোন সার্কিটের ক্ষেত্রে শর্ট সার্কিট মারাত্মক একটি ত্রুটি। এই ধরনের সার্কিটে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি কারেন্ট প্রবাহিত হয়, যার ফলে অনেক বেশি তাপ সৃষ্টি হয় এবং পরিবাহীর কোন অংশ দুবর্ল থাকলে তা পুড়ে যায়। আর এই পুড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য আমরা সার্কিটে ফিউজ বা সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করি। যার ফলে যখন কোথাও শর্ট সার্কিট হয় তখন ফিউজ বা সার্কিট ব্রেকার খুলে গিয়ে সম্পুর্ন সার্কিটকে ওপেন সার্কিট করে দেয়, যার ফলে সার্কিটটি অধিক ক্ষতি হতে বেঁচে যায়।
সার্কিটের গঠন অনুযায়ী সার্কিট আবার তিন প্রকারঃ
- সিরিজ সার্কিট
- প্যারালাল সার্কিট
- সিরিজ – প্যারালাল সার্কিট
৭। সিরিজ সার্কিটঃ
যে সার্কিটে বিদ্যুৎ প্রবাহের পথ একটি এবং ইলেকট্রিক্যাল রেজিস্ট্যান্স গুলো একের পর এক সংযোগ করা হয় তাকে সিরিজ সার্কিট বলে।
সিরিজ সার্কিটের সুত্রঃ
Rt = R1+R2+R3+……….. +Rn
সিরিজ সার্কিটের বৈশিষ্ট্যঃ
- সার্কিটের সকল অংশে সমপরিমান বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ, I=I1=I2=I3=I4=……..=In
- সার্কিটের মোট সাপ্লাই ভোল্টেজ ড্রপ বা ঘাটতি ভোল্টেজের সমান। অর্থাৎ,V=V1+V2+V3+……. +Vn
- সার্কিটের মোট রেজিস্ট্যান্স আলাদা ভাবে সংযুক্ত সকল রেজিস্ট্যান্সের গাণিতিক যোগফলের সমান। অর্থাৎ, Rt=R1+R2+R3+……..+Rn
সিরিজ সার্কিটের ব্যবহারঃ
- গাড়ির ব্যাটারি ও টর্চ লাইটে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- বিভিন্ন আলোকসজ্জার কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- মোটরের কয়েলে সিরিজ কানেকশনে ব্যবহার করা হয় এছাড়াও বহু ক্ষেত্রে সিরিজ সার্কিট ব্যবহার করা হয়।
সিরিজ সার্কিট ব্যবহারে সুবিধা ও অসুবিধাসমুহঃ
সিরিজ সার্কিটের সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি-
- সিরিজ সার্কিটের বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য মাত্র একটি পথ থাকে।
- সিরিজ সার্কিটের কোন লোডের একটি ফিউজ হয়ে গেলে বাকিগুলো কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
- সিরিজ সার্কিটের বিদ্যুৎ স্থির থাকে।
- সিরিজ সার্কিটের সকল লোডে সমপরিমান বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়।
সিরিজ সার্কিট সমন্ধে বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুনঃ
৮। প্যারালাল সার্কিটঃ
যে সার্কিটে বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য একাধিক পথ থাকে এবং সার্কিটের লোড বা রেজিস্ট্যান্সগুলোর এক প্রান্ত একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে এবং অপর প্রান্ত অন্য একটি বিন্দুতে সংযোগ থাকে তাকে প্যারালাল সার্কিট বলে।
প্যারালাল সার্কিটের সুত্র-
1/Rt = 1/R1+1/R2+1/R3+ ….. +1/Rn
প্যারালাল সার্কিটের বৈশিষ্ট্যঃ
সার্কিটে প্রবাহিত মোট বিদ্যুতের পরিমাণ বিভিন্ন রেজিস্ট্যান্সের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মোট বিদ্যুতের যোগফলের সমান। অর্থাৎ, I = I1+I2+I3+ ……. +In
প্রত্যেক রেজিস্ট্যান্সে আড়াআড়িভাবে যে ভোল্টেজ পাওয়া যায় তা সাপ্লাই ভোল্টেজের সমান। অর্থাৎ, V=V1=V2=V3= …….. =Vn কিন্তু এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ প্রত্যেক রেজিস্ট্যান্স এ ভাগ হয়ে যায়।
প্যারালাল সার্কিটের ব্যবহারঃ
- বিদ্যুৎ সরবরাহ, বিতরণ ব্যবস্থায় প্যারালাল সার্কিট ব্যবহার করা হয়।
- এছাড়া আমাদের চারপাশের সংযোগকৃত বেশিরভাগ সার্কিটই প্যারালাল সার্কিট।
- আমাদের বাসাবাড়ি,কল কারখানা, অফিস আদালত, রাস্তার লাইটসহ প্রায় সর্বত্রই প্যারালাল সংযোগ রয়েছে।
প্যারালাল সার্কিটের সুবিধা ও অসুবিধাঃ
- প্যারালাল সার্কিটে অসুবিধার চেয়ে সুবিধাই বেশি
- প্যারালাল সার্কিটে বিদ্যুৎ চলাচলের জন্য একাধিক পথ থাকে।
- কোন একটি লোডে সমস্যা দিলে বা নষ্ট হয়ে গেলে অন্যসব লোডে এর কোন প্রভাব পড়েনা।
- প্যারালাল সার্কিটের লোডগুলো আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- প্যারালাল সার্কিটের বিদ্যুৎ পরিবর্তনশীল।
- প্যারালাল সার্কিটের লোডে লোডের ক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়।
প্যারালাল সার্কিট সমন্ধে বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুনঃ
৯। সিরিজ- প্যারালাল সার্কিটঃ
যে সার্কিটে রেজিস্ট্যান্সসমূহ কিছু সিরিজে ও কিছু প্যারালালে সংযোগ করা থাকে তাকে সিরিজ-প্যারালাল সার্কিট বলে। এই সার্কিটকে মিশ্র সার্কিটও বলা হয়।
সিরিজ- প্যারালাল সার্কিটের ব্যবহারঃ
রেডিও , টেলিভিশনের সার্কিট, হিট কন্ট্রোলার, কম্পাউন্ড মোটর ইত্যাদিতে এ সার্কিট ব্যবহার করা হয়।
সিরিজ-প্যারালাল অংক করার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু নিয়মঃ
- প্রথমে দেখতে হবে সার্কিটে কোন শর্ট লাইন বা কোন রেজিস্ট্যান্স শর্ট আছে কিনা।
- সার্কিটের অভ্যন্তরীণ রেজিস্ট্যান্স সমুহ মূল সার্কিটের সাথে সিরিজে হিসাব করতে হবে।
- সার্কিটের ভোল্টেজ সোর্স এবং কারেন্ট সোর্স চিহ্নিত করে সাঠিকভাবে অংক করতে হবে।
- সার্কিট যদি জটিল মনে হয় তাহলে সেই সার্কিটকে সহজভাবে অংকন করে নিতে হবে।
- প্যারালাল সার্কিটে যদি একাধিক রেজিস্ট্যান্সের মান সমান থাকে তবে যতগুলো রেজিস্ট্যান্স আছে উক্ত সংখ্যা দ্বারা রেজিস্ট্যান্স এর মানটিকে ভাগ করে প্যারালাল শাখার সমতুল্য রেজিস্ট্যান্স এর মান বের কজএ নিতে হবে।
- যখন কোন প্যারালাল শাখার দুইটি রেজিস্ট্যান্স থাকে তখন উক্ত শাখাগুলোর কারেন্ট নির্ণয় করার জন্য শাখাটির পূর্ব মুহুর্তের কারেন্ট নিয়ে রেজিস্ট্যান্স গুলোর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কারেন্টের মান বের করতে হবে। যেমনঃ I1=(It*R2)/(R1+R2) এবং I1=It-I1 অথবা I2=(It*R1)/(R1+R2)
সিরিজ – প্যারালাল বা মিশ্র সার্কিট সমন্ধে বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুনঃ