যেকোন পাওয়ার প্ল্যান্ট অসংখ্য Equipment বা সরঞ্জামের সমন্বয়ে গঠিত। এখন আমরা স্টিম পাওয়ার প্ল্যান্টের বিভিন্ন সরঞ্জাম সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করব।
একটি আধুনিক স্টিম পাওয়ার প্ল্যান্টের গঠন অত্যন্ত জটিল এবং এতে অসংখ্য Equipment রয়েছে। স্টিম পাওয়ার প্ল্যান্টের গুরুত্বপূর্ণ সকল Equipment-গুলোকে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ
- Steam Generating Equipment
- কনডেন্সার (Condenser)
- প্রাইম মুভার (Prime Mover)
- পানি শোধনাগার (Water Treatment Plant)
- বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম (Electrical Equipment)
1. Steam Generating Equipment:
এটি স্টিম পাওয়ার প্ল্যান্টের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এই অংশটি নিম্নোক্ত Equipment এর সমন্বয়ে গঠিত। যেমনঃ
- Boiler (বয়লার)
- Boiler Furnace (বয়লার চুল্লি)
- Superheater (সুপারহিটার)
- Reheater (রিহিটার)
- Economiser (ইকোনোমাইজার)
- Air Pre-Heater (এয়ার প্রি–হিটার)
নিচে উপরোক্ত Equipment সমূহ বর্ণনা করা হলোঃ
Boiler (বয়লার):
বয়লারকে এক কথায় বাষ্প উৎপাদক বা Steam Generator বলা হয়। বাষ্প বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বয়লারের কাজ হলো জ্বালানির তাপে পানিকে বাষ্পে পরিণত করা। এই বাষ্পের ধাক্কায় স্টিম টারবাইন ঘূর্ণন গতি প্রাপ্ত হয়ে টারবাইনের শ্যাফট এর সাথে যুক্ত বৈদ্যুতিক জেনারেটরকে চালিত করে বৈদ্যুতিক জেনারেটর হতে বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপন্ন করে। একটি স্টিম পাওয়ার প্ল্যান্টের উৎপাদন ক্ষমতা ও ইউনিট সংখ্যার উপর ভিত্তি করে এক বা একাধিক সংখ্যক বয়লার স্থাপন করা হয়।
বয়লার টিউবের মধ্যে পানি অথবা অগ্নি তাপ প্রবাহের পার্থক্যভেদে বয়লারকে প্রধান দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
- ফায়ার টিউব বয়লার (Fire tube boilers) ও
- ওয়াটার টিউব বয়লার (Water tube boilers)
ফায়ার টিউব বয়লার (Fire tube boilers): যে বয়লারের টিউব বা নলের ভিতর দিয়ে আগুন জ্বলতে থাকে এবং এর বহির্দেশ (Exterior) দিয়ে পানি উত্তপ্ত হয়ে বাষ্পে পরিণত হয় তাকে ফায়ার টিউব বয়লার বলা হয়।
ফায়ার টিউব বয়লার সমূহ ড্রাম বা টিউব বিশিষ্ট হয়। এই বয়লারের অন্তর্দেশের টিউব সমূহ সাধারণত আনুভূমিক (horizontal), খাড়া (Vertical), হেলানো (inclined) প্রভৃতি অবস্থায় সংযোজিত (Attached) থাকে।
এই ধরনের বয়লারে ড্রাম বা টিউবের মধ্য দিয়ে অগ্নিতাপ প্রবাহিত হয় বলে এর তাপীয় ক্ষেত্র (Heating Surface) কম। সাধারণত একটি ফায়ার টিউব বয়লার ঘণ্টায় ১৮,০০০ পাউন্ড (৮,১৮১ কেজি) বাষ্প উৎপাদন করতে পারে।
ওয়াটার টিউব বয়লার (Water tube boilers): যে বয়লারের টিউবের ভিতর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে বাষ্পে পরিণত হয় এবং এর বহির্দেশ দিয়ে অগ্নি তাপ প্রবাহিত হয় তাকে ওয়াটার টিউব বয়লার বলে।
ওয়াটার টিউব বয়লার সমূহ সোজা ও বাকা নল আকৃতি (Straight and bent tube), আড়াআড়ি (Cross), এক বা একাধিক ড্রাম বিশিষ্ট (Single and multi-drum), লম্বিক ড্রামাকৃতি (Vertical drum), আনুভূমিক (Horizontal), খাড়া (Vertical) ও হেলানো নলাকৃতি (Inclined tubes) ইত্যাদি প্রকৃতির হতে পারে।
স্টিম পাওয়ার প্ল্যান্টে জন্য উচ্চ চাপ যুক্ত ওয়াটার টিউব বয়লার ব্যবহার করা হয়।
” বয়লার সম্বন্ধে খুঁটিনাটি আলোচনা ও চাকুরী ভাইবা সম্ভাব্য কিছু প্রশ্ন উত্তর “
Boiler Furnace (বয়লার চুল্লি):
বয়লারের যে চেম্বারে তাপ শক্তি পাবার জন্য জ্বালানী (Fuel) পোড়ানো হয় তাকে Boiler Furnace বা বয়লার চুল্লি বলে। এছাড়াও বয়লার চুল্লি Combustion Equipment (দহন সরঞ্জামগুলো)-কে পরিবেষ্ঠিত করে রাখতে সাহায্য করে।
Boiler Furnace এর দেয়াল Fire Clay (আগুনে পোড়ানো মাটি বা ইট), সিলিকা, চীনা মাটি ইত্যাদি দ্বারা তৈরী করা হয়। কেননা এসব উপাদান সমূহ উচ্চ তাপমাত্রায় আকৃতি, ওজন বা গঠনগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনকে প্রতিরোধ করতে পারে। এসব উপাদানকে Refractory Materials বলা হয়।
বয়লার চুল্লির দেয়াল তিন ধরণের হয়ে থাকে। যথাঃ
- Plain refractory walls
- Hollow refractory walls (বায়ু শীতলীকরণ ব্যবস্থাযুক্ত)
- Water walls.
কম তাপমাত্রা সম্পন্ন বয়লারের চুল্লিতে Plain Refractory Walls ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু যেসব চুল্লিতে অনেক উচ্চ তাপমাত্রা উৎপন্ন হয় সেসব চুল্লিতে এ ধরণের দেয়াল ব্যবহার করলে Refractory Materials গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। এরকম পরিস্থিতিতে Hollow Refractory Walls ব্যবহার করা হয় যেখানে বায়ু শীতলীকরণ ব্যবস্থা যুক্ত করা থাকে যা চুল্লির দেয়ালের তাপমাত্রা কমিয়ে স্বাভাবিক রাখে।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বয়লার চুল্লিতে Water Walls সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। অনেকগুলো ফাঁপা সরল টিউব পাশাপাশি একত্রিত করে Water Walls গঠন করা হয়। টিউবগুলো বয়লারের উপরের এবং নীচের Header গুলোর সাথে সংযুক্ত করা থাকে। এই ওয়ালের প্রতিটা টিউবের মধ্য দিয়ে বয়লারে পানি সঞ্চালন করা হয়। Water Walls চুল্লির তেজস্ক্রিয় তাপ শোষণ করে যা চুল্লির দেয়ালকে মাত্রাতিরিক্ত গরম হওয়া থেকে রক্ষা করে।
Superheater (সুপারহিটার):
বয়লার ড্রামে প্রাথমিকভাবে যে বাষ্প উৎপন্ন হয় তার তাপমাত্রা কম থাকে এবং তাতে কিছুটা জলীয় কণা বিদ্যমান থাকে যা স্টিম টারবাইনের জন্য অনেক ক্ষতিকর। তাই এই বাষ্পকে পুনরায় তাপ দিয়ে তাপমাত্রা বাড়িয়ে পুর্ন বাষ্পে পরিণত করতে হয়। আর এই পুর্ন বাষ্পে পরিণত করতে যে হিটার বা ডিভাইস ব্যবহার করা হয় তাকে সুপারহিটার বলা হয়।
সুপারহিটার দেখতে অনেকটা কুণ্ডলীকৃত পাইপের মতো যা চিমনির মধ্যে স্থাপন করা হয়। এর এক পাশ বয়লারের সঙ্গে এবং অন্য পাশ রিহিটারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। যেহেতু সুপার হিটারের নল বা পাইপ অত্যধিক তাপের সংস্পর্শে থাকে সেহেতু তা সাধারণত সংকর ইস্পাত (Alloy Steel) অথবা ক্রোমিয়াম –মলিবডেনাম ধাতু দ্বারা তৈরি করা হয়।
সুপারহিটারকে প্রধানত দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ
- রেডিয়্যান্ট সুপারহিটার (Radiant superheater) এবং
- কনভেকশন সুপারহিটার (Convection superheater)
রেডিয়্যান্ট সুপারহিটার: রেডিয়্যান্ট সুপারহিটার চুল্লির মধ্যে বয়লার স্থাপন করা হয়। চুল্লিতে জ্বালানির দহন ঘটিয়ে যে তাপ উৎপন্ন করা হয় তা প্রথমে ওয়াটার টিউবের পানিকে গরম করে বাষ্পে পরিণত করে এবং এই তাপ সরাসরি বিকিরণ প্রক্রিয়ায় সুপারহিটারের টিউবকে উত্তপ্ত করতে থাকে। বিকিরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উত্তপ্ত জ্বালানী থেকে তাপ গ্রহণ করে বলে একে রেডিয়্যান্ট সুপারহিটার বলা হয়।
কিন্ত এর দুটি প্রধান অসুবিধা রয়েছে। প্রথমত, চুল্লিতে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে এটি অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। দ্বিতীয়ত, সুপারহিটারের তাপমাত্রা বাষ্পের আউটপুট বৃদ্ধির সাথে হ্রাস পায়।
কনভেকশন সুপারহিটার: কনভেকশন সুপারহিটার চিমনির মধ্যে স্থাপন করা হয় এবং এটি ফ্লু গ্যাস হতে সম্পূর্ণ তাপ সঞ্চয় করে বাষ্পকে পুরোপুরি শুষ্ক বাষ্পে পরিণত করে। এর অন্যতম সুবিধা হচ্ছে, বাষ্পের আউটপুট বৃদ্ধির সাথে সুপারহিটারের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই কারণে, এই ধরণের সুপারহিটার সাধারণত বেশি ব্যবহার করা হয়।
কোন কোন ক্ষেত্রে উভয় হিটার একসাথে ব্যবহার করা হয়। তখন রেডিয়্যান্ট সুপারহিটারের উপরের দিকে কনভেকশন সুপারহিটার সংযোগ করা হয় এবং উভয়ই যথাক্রমে চুল্লি ও ফ্লু গ্যাস হতে তাপ প্রাপ্ত হয়।
রিহিটার (Reheater):
বয়লারে উৎপন্ন বাষ্প সুপারহিটারের সাহায্যে গরম হবার পর এবং স্টিম টারবাইনে প্রবেশ করার পূর্বে যে যন্ত্রের সাহায্যে বাষ্পকে পুনরায় তাপ প্রদান করা হয় তাকেই রিহিটার বলা হয়।
এটি চিমনিতে অবস্থিত ফ্লু গ্যাস হতে তাপ গ্রহণ করে এবং সুপারহিটেড বাষ্পকে পুনরায় তাপ প্রয়োগ করে বাম্পকে ১০০% বাষ্পে পরিণত করে বাষ্প টারবাইনে পাঠায়।
চিমনির মধ্যে সুপারহিটারের উপরের দিকে অথবা এর পরেই রিহিটারের অবস্থান। এর নির্মাণ পদ্ধতি ও আকৃতি অনেকটা সুপারহিটারের মতই। অর্থাৎ এটিও পাইপ বা নল আকৃতির তাপ প্রদানকারী যন্ত্র।
নিচের চিত্রে সুপারহিটার ও রিহিটারের অবস্থান দেখানো হলোঃ
বয়লারের যন্ত্রাংশ হিসেবে রিহিটারের কাজের গুরুত্বও কম নয়। লক্ষ্য করে দেখা গেছে যে, কোনো কোনো বয়লারে উৎপন্ন বাষ্প সুপারহিটারের মধ্য দিয়ে সরবরাহ করার পরও সেই বাষ্পে কিছু পরিমাণ জলীয় কণা থেকে যায়। আর এই জলীয় কণা্র কারণে স্টিম টারবাইনের ব্লেডে মরিচা ধরে যাবার সম্ভাবণা থাকে।
Economiser (ইকোনোমাইজার):
এটি এমন এক প্রকার যন্ত্র যা ফ্লু গ্যাস থেকে তাপ গ্রহণ করে বয়লারের পথে ফিড ওয়াটারকে প্রাথমিকভাবে কিছুটা গরম করে বয়লার ড্রামে প্রেরণ করে। কারণ, বয়লার ড্রামে ঠান্ডা পানি অপেক্ষা উত্তপ্ত পানি সরবরাহ করলে বয়লারের কার্যক্ষমতা কিছুটা বৃদ্ধি পায়।
এর একমুখ ফিড ওয়াটারের পাম্পের নির্গমন পাইপের সঙ্গে এবং অপরমুখ বয়লার ড্রামের সঙ্গে যুক্ত থাকে। ইকোনোমাইজারের পাইপের ভিতর দিয়ে ফিড ওয়াটার এবং বাহির দিয়ে ফ্লু গ্যাসের তাপ প্রবাহিত হতে থাকে।
Air Pre-Heater (এয়ার প্রি-হিটার):
যে যন্ত্রের সাহায্যে বাতাসকে Furnace বা চুল্লিতে প্রেরণের পূর্বে উত্তপ্ত করে সরবরাহ করা হয় তাকে এয়ার প্রি হিটার বলে। এর ফলে বয়লারের কার্যদক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
এয়ার প্রি হিটারের বেশ কয়েকটি সুবিধা রয়েছে যেমনঃ
- এটি প্রজ্জ্বলন প্রক্রিয়াকে সহজতর করে।
- এতে কয়লা খরচ কম হয় এবং নিম্ন মানের জ্বালানিও সহজে ব্যবহার করা হয়।
- চুল্লিতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
- বয়লারের কার্যদক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
- চুল্লির নির্মাণ খরচ কম হয়।
স্টিম পাওয়ার প্লান্টে চুল্লিতে উত্তপ্ত বাতাস সরবরাহের জন্য নলবিশিষ্ট এয়ার প্রি-হিটার ব্যবহার করা হয় এবং এর ভিতরের পাইপগুলো দুই পাশে প্লেটের মাধ্যমে খাড়া অবস্থায় সংযুক্ত থাকে। এয়ার প্রি-হিটারকে চিমনি ও ইকোনোইজারের মাঝখানে বসানো হয়। এর ভিতর ঠান্ডা বাতাস গরম ধোয়ার সংস্পর্শে এসে গরম হয়ে চুল্লিতে প্রবেশ করে।
ফ্লু গ্যাসগুলোর বাতাসে তাপ স্থানান্তর করার পদ্ধতির উপর নির্ভর করে এয়ার প্রি-হিটারকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
- রিকুপারেটিভ (recuperattive) এয়ার প্রি-হিটার এবং
- রিজেনারেটিভ (regenerative) এয়ার প্রি-হিটার
রিকুপারেটিভ এয়ার প্রি হিটার: এই প্রি-হিটারকে আবার (ক) নলাকৃতি (tubular type) এবং (খ) পাতাকৃতি (plate type) হিটার এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
নলাকৃতি হিটারে ৬.৩৫ হতে ৭.৬২ সে. মি. ব্যাসবিশিষ্ট ইস্পাতের তৈরি জাল থাকে এবং এর বাহিরের অংশে মাঝে মাঝে ফাঁকা রেখে লোহার পাত সংযুক্ত করা হয়, যা ১০ থেকে ১৪ কেজি ধাতব পাত দ্বারা তৈরি। এয়ার প্রি-হিটারকে চিমনির মধ্যে অথবা পাশে স্থাপন করা হয়।
পাতাকৃতি হিটার বা উত্তাপকে কতকগুলো পাত ও ধাতু সংযোগের মাধ্যমে একটির সঙ্গে অন্যটি সংযুক্ত করা হয়। পাতের উপর কিছু সংখ্যক ছিদ্র থাকে এবং এই ছিদ্রগুলোর ব্যাস সাধারণত ০.৬৪ থেকে ২ ৫৪ সে. মি. পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর বাতাস ছিদ্রের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং বাইরের দিক দিয়ে ফ্লু গ্যাস প্রবাহিত হয়।
রিজেনারেটিভ (regenerative) এয়ার প্রি-হিটার: রিজেনারেটিভ এয়ার প্রিহিটারকে ঘুরন্ত হিটারও বলা হয়। এর এক পার্শ্বের নলের মধ্য দিয়ে বাতাস এবং অপর পাশ্বের নলের মধ্য দিয়ে ফ্ল-গ্যাস প্রবাহিত করানো হয় সেই সঙ্গে হিটারটিও ঘুরতে থাকে। কর্পোরেট টিন নির্মিত পাত দ্বারা এই নলগুলি প্রস্তুত করা হয় এবং ফু-গ্যাসের তাপ বাতাসের মধ্যে প্রবেশ করার জন্য পথ আছে, এইভাবে ঠাণ্ডা বাতাস তাপ সংগ্রহ করে আস্তে আস্তে উত্তপ্ত হতে থাকে। এয়ার প্রিহিটারের এই উত্তপ্ত বাতাসকে বয়লার ড্রাফট পাখার সাহা্য্যে বয়লারের চুল্লিতে প্রেরণ করা হয়।
2. কনডেন্সার (Condenser):
যে যন্ত্রের সাহায্যে টারবাইন হতে বিতাড়িত বাষ্পকে ঘনীভূত করে পানিতে পরিণত করে পুনরায় ফিডওয়াটার হিসেবে বয়লারে সরবরাহ করা হয় সে যন্ত্রকে কনডেন্সার (Condenser) বলে। একে এক প্রকারের Heat Exchanger-ও বলা হয়।
কন্ডেন্সার (Condenser) প্রধানত দুই প্রকার। যথাঃ
- জেট কনডেন্সার (Jet Condenser)
- সারফেস কনডেন্সার (Surface condenser)
জেট কনডেন্সার (Jet Condenser):
একটি জেট কনডেন্সারে শীতল পানি ও এগজস্ট স্টিম একসাথে মিশ্রিত করা হয়। এর ফলে কনডেন্সার (Condenser) ছেড়ে যাওয়ার সময় শীতল পানি ও কনডেনসেট (condensate) এর তাপমাত্রা একই থাকে।
এই ধরণের কনডেন্সার (Condenser) এর সুবিধা হলো:
- এর প্রাথমিক ব্যয় কম।
- স্থাপন করতে কম জায়গার প্রয়োজন হয়।
- রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম।
তবে এর ২ টি অসুবিধাও রয়েছে। যেমনঃ
- সহজেই কনডেনসেট (condensate) নষ্ট হয়ে যায় এবং
- পানি পাম্প করার জন্য উচ্চ শক্তির (high power) প্রয়োজন হয়।
সারফেস কনডেন্সার (Surface condenser):
সারফেস কনডেন্সারে শীতল পানি ও এগজস্ট স্টিম সরাসরি মিশ্রিত থাকে না। এই ধরণের কনডেন্সার (condenser) এর সুবিধা হলোঃ
- কনডেনসেট (condensate)-টি ফিড ওয়াটার হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
- পানি পাম্প করার জন্য বেশি শক্তির (high power) প্রয়োজন পড়ে না। এবং
- টারবাইন নিষ্কাশনে ভালো ভ্যাকুয়াম তৈরি হয়।
এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। যেমনঃ
- প্রাথমিক ব্যয় (Initial Cost) বেশি।
- স্থাপন করতে বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়।
- রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশি।
যেহেতু সারফেস কনডেন্সারের সাহায্যে এগজস্ট বাষ্প ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে উষ্ণ পানিতে পরিণত হয়ে ফিডওয়াটার হিসাবে বয়লার ড্রামে প্রবেশ করে ফলে বয়লারের জ্বালানি খরচ প্রায় ২৫% কমে যায়। সেহেতু বর্তমান সময়ে এই কনডেন্সার জনপ্রিয়তার সাথে ব্যবহার করা হচ্ছে।
3. প্রাইম মুভার (Prime Mover)
স্টিম পাওয়ার প্ল্যান্টে স্টিম টারবাইনকে প্রাইম মুভার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
“প্রাইম মুভার সম্বন্ধে বিস্তারিত পড়ুন ”
স্টিম টারবাইন এমন একটি যন্ত্র যা বয়লারে উৎপন্ন বাষ্পের ধাক্কায় চালিত হয়ে যান্ত্রিক গতিশক্তি লাভ করে এবং এর সাথে সংযুক্ত জেনারেটরকে ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করে।
স্টিম পাওয়ার প্ল্যান্টে স্টিম ইঞ্জিন ব্যবহার না করে স্টিম টারবাইন ব্যবহারের কয়েকটি কারণ হলোঃ
- এর কার্যক্ষমতা বেশি।
- সহজ গঠন।
- ঘূর্ণন গতি অধিক এবং
- স্বল্প জায়গায় স্থাপন করা যায়।
স্টিম টারবাইনকে তার গঠন ও কার্যপ্রণালির উপর ভিত্তি করে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
- ইমপালস টারবাইন (Impulse Turbines)
- রিয়্যাকশন টারবাইন (Reactions turbines)
1.ইমপালস টারবাইন (Impulse Turbines):
যে টারবাইন বাষ্পের Impulsive Force বা সরাসরি ধাক্কায় কাজ করে তাকে ইমপালস টারবাইন (Impulse Turbines) বলে।
এই টারবাইনে চাকার চারদিকে অনেকগুলাে ব্লেড থাকে এবং চারদিকে ব্লেড সংলগ্ন নল থাকে। এই নল গুলোতে বাষ্প উচ্চ গতিতে চাপ সৃষ্টি করে যার ফলে এর ব্লেডগুলাে ঘুরতে থাকে, ব্লেডগুলো ঘুরার সাথে সাথে চাকাও ঘুরতে থাকে এবং চাকার সাথে সংযুক্ত শ্যাফটও একই গতিতে ঘুরতে থাকে। আর এই শ্যাফট এর সাথেই জেনারেটর আর্মেচার সংযুক্ত করা হয়, যা হতে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন হয়। ইমপালস টারবাইনের মাধ্যমে বাষ্পের চাপশক্তি কাজে লাগিয়ে যান্ত্রিক শক্তিতে রুপান্তর করা হয়।
যেখানে বাষ্পের পরিমাণ কম অথচ সরু নজলের মাধ্যমে উচ্চ বেগ প্রস্তুত করা হয়, সেখানে ইমপালস টারবাইন (Impulse Turbines) ব্যবহার করা হয়।
2. রিয়্যাকশন টারবাইন (Reactions turbines):
যে টারবাইন বাষ্পের Reactive Force বা চাপ শক্তিতে চালিত হয় তাকে রিয়্যাকশন টারবাইন (Reactions turbines) বলা হয়।
এটি মূলত বহু ধাপ বিশিষ্ট একটি টারবাইন (Multistage turbine)। এই টারবাইন কতগুলাে স্থির (Fixed) ও গতিশীল (Moving) রিয়্যাকশন ব্লেডের সমন্বয়ে গঠিত। এর সকল স্থির ব্লেড কেসিংয়ের ভিতরে পর্যায়ক্রমে সমান সংখ্যায় বসানো থাকে এবং গতিশীল ব্লেডগুলাে রােটরের সঙ্গে লাগানাে থাকে।
যেখানে বাষ্পের পরিমাণ বেশি অথচ স্থির ব্লেডের মাধ্যমে নিম্নচাপে বাষ্প প্রবাহিত করানাের প্রয়োজন পড়ে, সেখানে রিয়্যাকশন টারবাইন (Reactions turbines) ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশের আশুগঞ্জ, ঘােড়াশাল, সিদ্ধিরগঞ্জ, শিকলবাহা এবং গোয়ালপাড়া প্রভৃতি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রাইম মুভার হিসাবে স্টিম টারবাইন ব্যবহার করা হয়। এছাড়া চিনির কল, সেন্ট্রিফিউগ্যাল পাম্প, কমপ্রেসর এবং জাহাজেও স্টিম টারবাইন ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
4.পানি শোধনাগার (Water Treatment Plant):
যে পদ্ধতির মাধ্যমে বয়লারে সরবরাহকৃত পানি থেকে বিভিন্ন প্রকার অপদ্রব্য দূর করে পানি বিশুদ্ধ করা হয় তাকে সরবরাহকৃত পানি পরিশােধন বা Water Treatment বলে। আর এই কাজটি যেখানে করা হয় তাকে Water treatment plant বা পানি শোধনাগার বলা হয়।
একটি বয়লার ফিডের পানির উৎস সাধারণ একটি নদী বা হৃদ। এখান থেকে পানি প্রথমে স্টোরেজ ট্যাংকগুলোতে সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু পানিতে বিভিন্ন গ্যাস, আবর্জনা থাকতে পারে যা স্টোরেজ ট্যাংক ও বয়লারের জন্য ক্ষতিকর। তাই বয়লারে পানি পাঠানোর পূর্বে পানি পরিশোধন করে নেওয়া খুবই জরুরি।
পানি পরিশোধনাগারে প্রাথমিকভাবে পানি থেকে আবর্জনা, কাদামাটি ও গ্যাস আলাদা করার জন্য ছাকনি ব্যবহার করা হয়। এরপর তা থেকে ক্ষতিকারক উপাদানসমূহ আলদা করা হয় এবং বিভিন্ন যান্ত্রিক, তাপীয় ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানিকে পরিশোধন করে বয়লারে প্রেরণ উপযোগী করা হয়।
5. বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম (Electrical Equipment):
একটি আধুনিক স্টিম পাওয়ার প্ল্যান্টে অসংখ্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম রয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম গুলো হচ্ছেঃ
অল্টারনেটর (Alternators):
প্রতিটি অল্টারনেটর স্টিম টারবাইন এর সাথে কাপল করা থাকে এবং টারবাইন এর মেকানিক্যাল এনার্জিকে ইলেকট্রিক্যাল এনার্জিতে রুপান্তর করে। অল্টারনেটরকে হাইড্রোজেন বা বাতাস দিয়ে ঠান্ডা করা হয়। অল্টারনেটরকে এক্সাইটেড করার জন্য এর শ্যাফটের সাথে প্রধান এক্সাইটার বা পাইলট (সহযোগী) এক্সাইটারকে যুক্ত করা হয়।
“অল্টারনেটর সম্বন্ধে সহজ ভাষায় বিস্তারিত পড়ুন “
একটি পাওয়ার প্ল্যান্টে বিভিন্ন ধরনের ট্রান্সফরমার রয়েছে। যেমনঃ
(ক) মেইন স্টেপ-আপ ট্রান্সফরমার: যা পাওয়ার ট্রান্সমিশন করার জন্য জেনারেশন ভোল্টেজকে স্টেপ-আপ করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
(খ) স্টেশন ট্রান্সফরমার: যা পাওয়ার প্ল্যান্টের সাধারণ পরিষেবার জন্য ব্যবহার হয়, যেমনঃ লাইটিং।
(গ) সহায়ক ট্রান্সফরমার: যা পৃথক ইউনিট-সহায়কগুলিতে সরবরাহ করে।
” ট্রান্সফরমার সম্বন্ধে বিস্তারিত পড়ুন “
সুইচগিয়ার (Switchgear):
এটিতে এমন কিছু সরঞ্জাম রয়েছে যা সিস্টেমের ত্রুটি সনাক্ত করে এবং ত্রুটিযুক্ত অংশটিকে Healthy Section থেকে পৃথক করে রাখে। এতে সার্কিট ব্রেকার, রিলে, সুইচ এবং অন্যান্য কন্ট্রোলিং ডিভাইসও রয়েছে।
” সুইচগিয়ার সম্বন্ধে বিস্তারিত পড়ুন “
References:
Principles of Power system by V. K. Metha & Rohit Metha
Wikipedia
Electrical4u.com
অন্যান্য লেখাসমূহঃ
পাওয়ার প্ল্যান্টঃ সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও কার্যপদ্ধতি
স্টিম পাওয়ার প্ল্যান্টঃ সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, উপাদান ও প্রাথমিক ধারণা
স্টিম পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য স্থান নির্বাচন