এই লেখাতে যেসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছেঃ
- ট্যারিফ কি (What is Tariff)
- ট্যারিফের উদ্দেশ্য (Objective of tariff)
- ট্যারিফের কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য (Desirable characteristics of a tariff)
ট্যারিফ কি (What is Tariff)?
গ্রাহকদেরকে যে নির্ধারিত মূল্যে বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহ করা হয় তাকে ট্যারিফ (Tariff) বা বৈদ্যুতিক শুল্ক বলা হয়।
অথবা, গ্রাহকরা বিদ্যুৎ ব্যবহার করার জন্য যে নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করে থাকে তাকে ট্যারিফ বা বৈদ্যুতিক শুল্ক বলা হয়।
আমাদের দেশে যা “বিদ্যুৎ বিল” হিসেবে পরিচিত।
ভিন্ন ভিন্ন পাওয়ার প্ল্যান্ট ও ভিন্ন ভিন্ন গ্রাহকদের ট্যারিফ তাদের ব্যবহারের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। তবে সাধারণ গ্রাহকদের তুলনায় big consumers (বড় গ্রাহক) বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের বেশি বিল পরিশোধ করতে হয়। গ্রাহকরা কতটুকু ট্যারিফ বা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করবে তা নির্ভর করে বিদ্যুৎ ব্যবহারের উপর।
আমাদের দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো মিটারের রিডিং অনুযায়ী গ্রাহকদের কাছ থেকে ট্যারিফ দাবি করে থাকে এবং এরাই বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন, বন্টন ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এই বিদ্যুৎ বিল বা ট্যারিফের সাথে সরকারি শুল্কও (Govt. tariff) দাবি করা হয়।
নিচের চিত্রে DPDC এর ট্যারিফ রেট দেখানো হলোঃ
ট্যারিফের উদ্দেশ্য (Objective of tariff):
অন্যান্য পন্যের মতো বিদ্যুৎ শক্তিও একটি নির্ধারিত মূল্যে সরবরাহ করা হয় তাই সকল ব্যয় রিকভারি (recovery) করে বিনিয়োগকৃত মূলধনের উপর উপযুক্ত লভ্যাংশ আয় করাও এর উদ্দেশ্য থাকে।
একটি বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কোম্পানির ট্যারিফ আদায়ের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত উদ্দেশ্য থাকতে পারে-
- বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ রিকভারি (recovery) করা।
- ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশনে বিনিয়োগকৃত মূলধন রিকভারি (recovery) করা।
- গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ পৌছাতে অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে যে খরচ হয় তা রিকভারি (recovery) করা।
- সর্বোপরি বিনিয়োগকৃত মূলধনের উপর একটি উপযুক্ত লভ্যাংশ আয় করা।
ট্যারিফের কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য (Desirable characteristics of a tariff):
ট্যারিফ নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিচের শর্তগুলো মেনে চলা উচিত-
1. Proper return (সঠিক বিনিময়): ট্যারিফ এমনভাবে ধার্য করা উচিত যেনো প্রত্যেক গ্রাহক তা পরিশোধ করতে পারে। সেই সাথে এটিও লক্ষ্য রাখা উচিত যেনো গ্রাহকদের থেকে যে বিল আদায় করা হবে তা দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণসহ সকল ব্যয় রিকভারি করার পর তা থেকে যেনো কিছুটা লভ্যাংশ আয় করা যায়। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানীগুলো গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্ন ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সেবা দিতে পারবে এবং দেশের বিশিষ্ট জনেরা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে আগ্রহী হবেন।
2. Fairness (সততা):
ট্যারিফ তৈরির ক্ষেত্রে সততা বজায় রাখতে হবে। ন্যায্য মূল্য অনুযায়ী গ্রাহকদের কাছে সঠিক ট্যারিফ দাবী করতে হবে। এর ফলে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ ব্যবহারে সন্তুষ্ট থাকবে। এছাড়া যারা বেশি এনার্জি ব্যবহার করে যেমনঃ বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান এদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একক ইউনিট পর্যন্ত দাম কম রাখা যেতে পারে। এতে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের বিদ্যুৎ ব্যবহারে উৎসাহী হবেন।
3. Simplicity (সরলতা /সহজতর):
ট্যারিফ রেট সিডিউল বা বিদ্যুৎ বিলের কাগজ জটিল হলে গ্রাহকদের কাছে তা বিরক্তিকর মনে হতে পারে। তাই এটি এমনভাবে তৈরি করা উচিত যাতে যেকোনো গ্রাহক তা খুব সহজেই বুঝতে পারে।
4. Reasonable profit (যুক্তিসঙ্গত মুনাফা): ট্যারিফে মুনাফার পরিমাণ যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে হতে হবে। সাধারণত একটি বৈদ্যুতিক সুপার-প্লে কোম্পানি ও একটি পাবলিক ইউটিলিটি কোম্পানিগুলো একচেটিয়া সুবিধা ভোগ করে থাকে। তাই অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এদের বিনিয়োগ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। অতএব, ট্যারিফে মুনাফার পরিমাণ একটু সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণ করা উচিত।
5. Attractive (আকর্ষণীয়): ট্যারিফ পরিশোধের মাধ্যম সহজতর ও আকর্ষণীয় হওয়া উচিত যাতে করে গ্রাহকরা খুব সহজেই ট্যারিফ পরিশোধ করতে পারে। বর্তমানে আমাদের দেশে ট্যারিফ পরিশোধের জন্য ব্যাংকি ও মোবাইল ব্যাকিং ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে।
এ সম্পর্কিত অন্যান্য লেখা পড়ুনঃ
ইলেকট্রিক্যাল সাবস্টেশন সম্বন্ধে সহজ ভাষায় আলোচনা।
প্ল্যান্ট ক্যাপাসিটি ফ্যাক্টর ও প্ল্যান্ট ইউজ ফ্যাক্টর পড়ুন।
ম্যাক্সিমাম ডিমান্ড ও ডিমান্ড ফ্যাক্টর সম্বন্ধে পড়ুন।
লোড ফ্যাক্টর ও ডাইভার্সিটি ফ্যাক্টর সম্বন্ধে পড়ুন।
কানেক্টেড লোড ও এভারেজ লোড সম্বন্ধে পড়ুন।
সাবস্টেশনের বিভিন্ন উপাদান সম্বন্ধে আলোচনা।