পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যপদ্ধতি | Working Principle of Nuclear Power Plant

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এক প্রকার শক্তিশালী তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে অল্প পরিমাণ জ্বালানি দিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা যায়, যা অন্যান্য তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সম্ভব হয় না। এই লেখাতে আমরা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যপদ্ধতি সম্বন্ধে আলোচনা করব।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যপদ্ধতিঃ

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কার্যপদ্ধতি মূলত ৪ টি উপাদানের উপর নির্ভরশীলঃ
১. Nuclear Reactor (পারমাণবিক চুল্লি)
২. Heat Exchanger (তাপ পরিবর্তনকারী)
৩. Steam Turbine (বাষ্প টারবাইন) এবং
৪. Alternator (অল্টারনেটর)

নিচে চিত্রের সাহায্যে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যপদ্ধতি দেখানো হলোঃ

নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট
একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যপদ্ধতি

শুরুতেই বলে রাখি, একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান উপাদান হচ্ছে Nuclear Reactor বা পারমাণবিক চুল্লি। পারমাণবিক চুল্লির কাজ অনেকটা স্টিম পাওয়ার প্ল্যান্টের ফার্নেসের কাজের মতো। এই চুল্লিতে পারমাণবিক জ্বালানি (ইউরেনিয়াম-২৩৫)-এর শৃঙ্খল বিক্রিয়া (chain reaction) ঘটিয়ে অত্যধিক তাপ শক্তি উৎপাদন করা হয়।

শৃঙ্খল বিক্রিয়া (chain reaction)
শৃঙ্খল বিক্রিয়া (chain reaction)


মূলত ইউরেনিয়াম-২৩৫ (U-235) কে নিউট্রন দ্বারা আঘাত করলে নিউক্লিয়ার বিভাজনের (Nuclear Fission) মাধ্যমে পারমাণবিক চুল্লির মধ্যে প্রচুর পরিমাণ তাপ শক্তি উৎপন্ন হয়, যা এই চুল্লিতে ব্যবহৃত শীতলক বা কুল্যান্ট (coolant)-কে উত্তপ্ত করে রাখে।
কুল্যান্ট থেকে এই তাপ heat exchanger-এ চলে যায়। Heat Exchanger তখন তাপকে বাষ্পে পরিণত করে এবং বাষ্প তৈরির পর অবশিষ্ট তাপ নিজেই শীতল হয়ে পাম্পের সাহায্যে চুল্লিতে চলে যায়।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
Nuclear Reactor (পারমাণবিক চুল্লি)

Heat Exchanger-এ উৎপাদিত বাষ্প প্রচন্ড গতি নিয়ে স্টিম টারবাইনকে আঘাত করে ঘূর্ণন গতি সৃষ্টি করে। যেহেতু টারবাইনের শ্যাফট এবং অল্টারনেটর একই শ্যাফটের সাথে যুক্ত করা থাকে সেহেতু টারবাইনের ঘূর্ণনের ফলে অল্টারনেটরও ঘুরতে শুরু করে। এর ফলে তখন অল্টারনেটর থেকে বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপন্ন হতে থাকে।

এই দিকে অবশ্য টারবাইন থেকে বিতাড়িত বাষ্প (exhaust steam) কন্ডেন্সারে চলে যায় এবং সেখান থেকে বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ফিড ওয়াটার পাম্পের সাহায্যে Heat Exchanger এ চলে যায়।

আর অল্টারনেটরে যে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন হচ্ছে তা সাব-স্টেশনে দেওয়া হয়। সেখান থেকে ট্রান্সফরমার, সার্কিট ব্রেকার, আইসোলেটর ও বাস-বার থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক গ্রাহকের নিকট পৌছে দেওয়া হয়।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যপদ্ধতি দেখতে নিচের ভিডিওটি দেখুনঃ

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যপদ্ধতি দেখুন।সোর্সঃ Thomas Schwenkeপারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্বন্ধে আরও জানতে নিচের লিংকে ভিজিট করুনঃ https://blog.voltagelab.com/6570/

Posted by Voltage Lab on Wednesday, April 8, 2020
পাওয়ার প্ল্যান্ট সম্বন্ধে অন্যান্য লেখাঃ

সাব-স্টেশন সম্বন্ধে জানুন।
পারমাণবিক চুল্লি সম্বন্ধে জানুন।
স্টিম পাওয়ার প্ল্যান্টের কার্যপদ্ধতি।
হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার প্ল্যান্টের কার্যপদ্ধতি।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বিবেচ্য বিষয়।
তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য উপযুক্ত এলাকা নির্বাচন।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সুবিধা ও অসুবিধা।
ইউরেনিয়াম সম্বন্ধে আলোচনা।
বর্তমান বিশ্ব ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
বাষ্প বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্বন্ধে আলোচনা।
পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইতিহাস ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা
পাওয়ার প্ল্যান্টঃ সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও কার্যপদ্ধতি